ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় দখিণের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। বরিশালের ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলায় জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রস্তুতি সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং চলমান রয়েছে। একই সাথে এসব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বরিশালে ঘূর্নিঝড় মোখা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের সভা
বরিশালে ঘূর্নিঝড় মোখা মোকাবিলায় ৩ হাজার ১০১ টি আশ্রয়ন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত রয়েছে ৩৫টি মুজিব কেল্লাও।
এসব কেন্দ্রে ১৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬০৬ জন মানুষ ও ১২ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৯০ গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান।
শনিবার বিকেলে নগরীর সার্কিট হাউজে ঘূর্ণিঝড় মোখা এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় এসব কথা জানান তিনি। তিনি আরও জানান, বরিশাল বিভাগের ২ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মজুদ, নগদ অর্থ রয়েছে ৫৯ লক্ষ ২০ হাজার ৮০৪ টাকা। এছাড়া কম্বল ২০ হাজার ৭শ পিস, টিন ৫৪৩ বান্ডেল, স্বেচ্ছাসেবক ৩৯ হাজার ৪২৫ জন, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ৪৮টি ও মেডিক্যাল টিম ৩৫৭টি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২০টি মোখা মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। এ সময় ঘূর্নিঝড় মোখা মোকাবেলায় ৬ জেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জরুরী সভায় রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, শেখ হাসিনা সেনা নিবাসের লেফট্যান্টে কর্নেল হাবিবুর রহমান, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তুত রয়েছে ৩২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগজুড়ে প্রস্তুত হয়ে কাজ শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এরইমধ্যে উপকূলীয় নদী তীরবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে তারা বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, ‘গোটা বরিশাল বিভাগে তাদের ৩২ হাজার ৫২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। যারা এরইমধ্যে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কার্যক্রম শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে সাইক্লোন শেল্টারে সাধারণ মানুষকে নেওয়ার জন্যও কাজ করবেন তারা।’
অপরদিকে বরিশাল জেলায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এরইমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহকারী পরিচালক গোলাম কবির।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বৃহত্তর বরিশাল বিভাগে বিভাগে ৩ হাজার ৯৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র এরইমধ্যে আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলায় রয়েছে ৫৪১টি, বরগুনা জেলায় ৬৪২ টি, পটুয়াখালীতে ৭০৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৬ টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ভোলা জেলায় ৭৪৬ টি, পিরোজপুরে ৪০৭ টি ও ঝালকাঠিতে ৬২ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চিকিৎসা সেবায় মেডিকেল টিম
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বরিশালে ১১টি, ভোলায় ৯৮টি, পিরোজপুরে ৬৩টি, বরগুনায় ৪২টি, পটুয়াখালীতে ৭৬টি ও ঝালকাঠিতে ৩৮ টি মেডিকেল টিম গঠন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে মোখা মোকাবিলায় প্রতি জেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধের পর্যাপ্ত যোগান তাদের রয়েছে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় প্রতিটি জেলায় শুকনা খাবার, চাল, নগদ টাকা, কম্বল, ডেউটিনসহ ত্রাণসামগ্রী হিসেবে মজুদ রাখা হয়েছে।