এম.এস.আই লিমনঃ
নানান বিতর্কের জন্ম দিয়ে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়াই বরিশালের জনগন তথা দক্ষিণাঞ্চলের আঃলীগের রাজনীতি শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বরিশাল নগরে শান্তির সুবাতাসের সাথে সাথে পূর্বের থাকা আতঙ্ক থেকে বের হয়ে আসছে এখানকার জনগন বলে মন্তব্য করেন নগর আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা।
আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে নামা নৌকা মার্কার সমর্থকরা চাচ্ছেন না বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে ফিরে আসুক। তারা বলছেন, সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে আসলে বরিশাল সিটি নির্বাচনে লাভের চেয়ে নৌকা তথা আওয়ামীলীগ সংগঠনের ক্ষতিই বেশি হবে। তাই তিনি বরিশালে এলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে তার করা নানান বিতর্কিত কর্মকান্ড সহ অজস্র অভিযোগের ভিত্তিতে আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (মন্ত্রী) বরিশাল ১ আসনের সংসদ সদস্য মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র বড় ছেলেকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে তার চাচা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত এর ছোট ছেলে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত নৌকার মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন মনোনয়ন বোর্ডের সকলের সম্মতিক্রমে সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।
আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে বরিশালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সহ এখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ।বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম সদর ৫ আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হলে তাকে সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।এরপর থেকেই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত জাহিদ ফারুক এমপি’র সাথে সক্ষতা গড়ে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি’র ক্লিন ইমেজের কারনে তার অনুসারীরা নৌকার মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে ব্যপক সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নিয়ে তাকে বিজয়ী করতে সমান ভাবে কাজ করে যাচ্চে।এছাড়াও খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই তার হয়ে মাঠে নামেন সাদিকবিরোধী সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারীরা। হিরন অনুসারীরা বিগত প্রায় ৯ বছর ধরে কোণঠাসা হয়ে বরিশাল রাজনীতির বাইরে ছিলেন। আবার অধিকাংশরাই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী’র বলয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর সাদিক অনুসারীদের চাপে কেউ কেউ বরিশালের বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
এখন তারাই নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের হাত ধরে বরিশালের রাজনীতিতে ফিরে নিজেদের আগের অবস্থান ফেরাতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী’র নেতৃত্বে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছে। তারাই জোট বেঁধে সাদিক আবদুল্লাহকে বরিশালে ফিরতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে সাদিক অনুসারীদের পেশীশক্তির জোরে নিয়ন্ত্রণে নেয়া বরিশাল-ভোলা স্পিডবোট ঘাট ও রুপাতলী বাস টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় তাদের থেকে দখলমূক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ (বাকসু) ভবনে জবর দখল করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তালা বদ্ধ করে রাখা ভবনটিও মূক্ত করে দেয়া হয়েছে বিএম কলেজ ছাত্রসংসদ এর নেতাকর্মীদের জন্য।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটি’র সদস্য ও বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আসাফুদৌল্লা অসিম দেওয়ান বলেন, তারাতো (সাদিক এবং তার অনুসারী) নৌকার পক্ষে কাজ করবেন না। এই যে দেখুন, পরপর তিনবার হামলা হলো নৌকার কর্মীদের ওপর। দলকে ভালোবাসলে কি তারা এভাবে হামলা করতে পারতো ? যে কোনো মূল্যে মেয়র সাদিকের বরিশালে আসা প্রতিহত করবো আমরা। কেননা তিনি বরিশালে এলে নৌকাকে হারানোর মিশন নিয়েই আসবেন তিনি।
বিসিসি’র আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএম কলেজ কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মোঃমঈন তুষার বলেন, ‘দল নয়, এরা সাদিকপন্থি। এদের দিয়েই গত সাড়ে চার বছর নগরে নানা অপকর্ম করিয়েছেন সাদিক।ব্যক্তিগত ভাবে প্রভাববিস্তার করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলেই তারা বরিশাল নগর টাকে বেছে নিয়েছিলো।এরা মাঠে নামলে নৌকার পক্ষে ভোট বরিশালের জনগন দিতে ভয় পাবে কেননা তাদের ভয়ংকর রূপ বরিশাল বাসীর চিরচেনা।যে কারনে তারা নৌকার পক্ষে নামলে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র বরিশাল বাসীর শান্তি ফিরিয়ে দিতে নৌকার প্রার্থীকে দেয়া হয়েছে তারা তাকে পরাজিত করার নগ্নমিশন বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলেন।
তিনি আরো বলেন,আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত কে নৌকা মার্কা দিয়ে বরিশাল বাসীকে উপহার সরুপ আমাদের প্রিয় নেত্রী পাঠিয়েছেন। বরিশালের মানুষ পরিবর্তন চায়। দলমত নির্বিশেষে তাই সবাই এখন নৌকার পক্ষে।কেননা দেশ ব্যাপী উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান জনগণের কাছে ।মান্নামার্কা (সাদিক আবদুল্লাহর একনিষ্ঠ কর্মী মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক রইচ আহমেদ মান্না) নেতারা মাঠে নামলে সেই ঐক্য আর থাকবে না। সাধারণ ভোটাররাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়বেন।’
নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন ‘নৌকা যাতে না বিজয়ী হতে পারে, সেজন্য নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন বিতর্কিত বরিশালের মেয়র সাদিক ও তার অনুসারীরা। সাড়ে চার বছর বরিশালে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিলেন তারা। এ অবস্থায় তিনি (সাদিক) বরিশালে এলে একদিকে যেমন নৌকার ক্ষতি করবেন, বর্তমানে শান্তিপ্রিয় নগরবাসী পুনরায় তেমনই ভয় পাবেন সাধারণ মানুষ। সেক্ষেত্রে ভোট হারাবে নৌকা। বঞ্চিত হবে পুনরায় উন্নয়ন থেকে বরিশাল নগরবাসী, ৎন্নয়নের স্বার্থে বরিশাল নগরের শান্তি রক্ষার্থে তাই আমরা চাই না তারা আসুক। তারপরও যদি আসার চেষ্টা করেন তাহলে প্রতিহত করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা বলেন, মনে হচ্ছে, নৌকার বিজয় নয়, দখল আর প্রতিপক্ষ দমনের প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধ আয়ের জায়গাগুলো সাদিক অনুসারীদের হাত থেকে নিজেদের হাতে নেওয়ার চেষ্টায় আছে একটি পক্ষ। আরেক পক্ষ চাইছে ৯ বছরের কোণঠাসা পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে রাজনীতির মাঠের দখল নিতে।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগ এর সাবেক এক সহ সম্পাদক বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়া বর্তমান মেয়র অনুসারীরা সংগঠনের বিভিন্ন পদ দখল করে শুধু নৌকার পক্ষে থাকার বুলি আওড়াচ্ছেন বাস্তবে সংগঠনের প্রকৃত সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন নেতা কর্মীরা প্রার্থীর ডাকের অপেক্ষা করতো না বরং সংগঠনের সিদ্ধান্তকে গ্রহন করে সম্মান জানিয়ে নিজ অবস্থান থেকে নৌকার পক্ষে কাজ করে সাংগঠনিক পরিচয় দিত। সত্য বলতে এরাই হাইব্রিড আঃলীগ নেতা! ব্যক্তী অনুসারী / পন্থী হিসেবে নিজেদের সেসকল নেতাদের পকেটের লোক হিসেবে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে সংগঠনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। তারা সংগঠন করে কিন্তু সাংগঠনিক বিধি মোতাবেক নয় যেকারণে অন্তরীণ কোন্দলের কারণে নৌকা তথা আওয়ামী লীগ সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে । তার অনুরোধের কারনে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি তবে তার সাংগঠনিক পরিচয় উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে দল থেকে মনোনয়ন থেকে বাদ পরা বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডঃ একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, নৌকার জন্য আমরাও কাজ করছি। কিন্তু যেভাবে দলে বিভাজন করা হচ্ছে, তাতে আমাদেরই যে ক্ষতি হচ্ছে, তা কি তারা বোঝেন না?
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলে টুকটাক জটিলতা থাকতেই পারে। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। দল, প্রার্থী ও নৌকা প্রশ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।