নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে । অভিযোগ রয়েছে বরাদ্দকৃত অর্থের থেকে কম ব্যয়ে নির্মিত মুজিববর্ষের ঘর গুলো হস্তান্তরের পূর্বেই বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে মুজিবর্ষের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
নবনির্মিত বেশিরভাগ ঘরের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করেছে। প্রায় ৩০টি ঘরের লোহার দরজা-জানালা ভেঙে পড়ছে। এছাড়া ঘর নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের কাঠ ও লোহার সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। হস্তান্তরের আগেই এসব ঘরের বেহাল অবস্থার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও উপকারভোগীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। ইউএনও ঘরের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করলেও তিনি এ দায় চাপিয়েছেন নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতদের ওপর।
জানা যায়, বছরের শুরু দিকে ৪র্থ ধাপে ৭ কোটি ৮৮ লাখ ৬ হাজার ৫শ টাকা ব্যয়ে ২৭৭টি মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন ইউএনও সজল চন্দ্র শীল। উপকারভোগীদের মাঝে ইতোমধ্যে ঘরের দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। ৪র্থ ধাপের বেশির ভাগ ঘরের নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। এখন এসব ঘর হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে হস্তান্তরের আগেই বেশির ভাগ ঘরে দেখা দিয়েছে একাধিক সমস্যা। উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের দাওকাঠিতে নির্মিত মুজিববর্ষের ৩৯টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও হস্তান্তরের আগেই ৩০টি ঘরের অর্ধশত দরজা-জানালা ভেঙে পড়ার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘরগুলো পরিদর্শনে দেখা গেছে, দাওকাঠির ৩৯টি ঘরের মধ্যে ৩০টি ঘরের শতাধিক দরজা-জানালা ভাঙা। বেশ কয়েকটি ঘরের দরজা সামনের অংশ ও খুঁটির পলেস্তারা খসে গিয়ে ভেতরের রড ও লোহার অংশ বের হয়ে আছে। শৌচাগারের জন্য প্রস্তুত রাখা রিং ও স্ল্যাব ভেঙে গেছে। অনেক স্থানে বসানো রিংয়ের ঢাকনা ফেটে গেছে। এছাড়া ঘরের চালে ব্যবহৃত টিনের স্ক্রু নড়বড়ে থাকায় বৃষ্টির পানি ঘরের ভেতরে পড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে বাধা দিলে তার (ইউএনওর) লোকেরা মামলা-হামলার ভয় দেখিয়েছে। ঘরের নির্মাণ কাজের সময় কাছে আসতেও ইউএনওর নিষেধাজ্ঞা ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাব বিস্তার করে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে ইউএনও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের মাপেও নয়ছয় করছেন। একই ইউনিয়নের কাঁঠালিয়াতে ১৯টি, নিয়ামতিতে ৪৬টি, কলসাকাঠিতে ২৭টি, ফরিদপুরে ৪২টি, চরামদ্দির কাঁটাদিয়ায় ৫৯টি ও চরাদিতে ৪৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এসব ঘর নির্মাণেও ইউএনও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মুজিববর্ষের এসব ঘর নির্মাণে ইউএনও একাই ঠিকাদারি করছেন। ইউএনও সরাসরি ঘর নির্মাণ করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এসব কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ঘর নির্মাণ করলে কাজের মান খারাপ হলেও আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না। এছাড়া তৃতীয় ধাপের ঘর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক চেয়ারম্যান। তারা বলেন, বেশির ভাগ ঘর অল্প জোয়ারের পানিতেই তলিয়ে যায়। ফলে বর্ষার সময় ওইসব ঘরে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
নির্মাণ কাজে অনিয়ম নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ আকন বলেন, ৪র্থ ধাপে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। এবার ঘর নির্মাণে বরাদ্দ বাড়লেও কাজের মান বাড়েনি। তিনি বলেন, পূর্বের ঘরগুলোর চেয়েও ৪র্থ ধাপের ঘরের কাজের মান খারাপ হচ্ছে। দাওকাঠিতে ঘর নির্মাণে ভিমে রডের পরিবর্তে ইট দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। লোহার সামগ্রীর ক্ষেত্রে গ্রেড ছাড়া মাল দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এসব কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ইউএনও কোটি টাকার ওপরে আত্মসাৎ করেছেন।
ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, কনস্ট্রাকশন কাজের সঙ্গে অনেক লোক জড়িত থাকায় কিছু ত্রুটি হতে পারে। এসব ত্রুটি ঘর হস্তান্তরের আগে সংস্কার করে দেওয়া হবে। তবে তিনি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এদিকে স্থানীয়রা এ বিষয় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানায় সরকারের কাছে।