স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রথমবারে মত বরিশালের প্রায় ১৪’শ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পাচ্ছেন পাকা ভবনে মাথা গোজার ঠাই। ঘরহীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নবাসিত করার লক্ষ্যে উপহারসরূপ তাদের নিজভুমিতে পাকা ঘর নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের সার্বিক ত্বত্বাবধানে নির্মান কাজ শুরু হয়েছে অর্ধশতাধীক ঘরের। আগামী জুলাই মাসে প্রথম ধাপে নির্মিত ঘর হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এদিকে উপহারের ঘর নির্মানে আনন্দে উদ্বাসিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মান প্রকল্প হাতে নেন। যেই প্রকেল্পের আওতায় ২০২০ সালে উপজেলাওয়ারী গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রথম ধাপে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় ৩৮৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে পাকা ঘর নির্মান করে দেয়ার তালিকা চুরান্ত করা হয়। এরমধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ৪৬ টি, গৌরনদী ৫১ টি, আগৈলঝাড়ায় ৩৫ টি, বানারীপাড়ায় ২৭ টি, বাকেরগঞ্জ ৪৫ টি, হিজলায় ৯টি, বাবুগঞ্জ ৫০ টি, উজিরপুর ৫২ টি, মেহেন্দিগঞ্জ ৩৩ টি ও মুলাদী ৩৯ টি ঘর রয়েছে। ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ ঘরে থাকছে দুটি বেড রুম, ১ টি ডাইনিং রুম, ১টি ড্রইং রুম, ১টি খোলা বারান্দা, দুটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরের আয়তন ৭৩২ বর্গ ফুট। ইতোমধ্যে প্রথমধাপের ৯৬ টি ঘর নির্মানের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। বরিশাল জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, টেন্ডার হওয়া অধিকাংশ ঘরেরই নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে নির্মান কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রথমধাপের কাজ শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয়ধাপে বরিশাল জেলায় আরো প্রায় ১ হাজার ঘর নির্মানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৬ টি উপজেলা প্রশাসন তাদের চুরান্ত তালিকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে প্রেরন করেছেন। এরমধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ১৭১ টি, হিজলায় ১৩ টি, বাকেরগঞ্জ ৯৪ টি, উজিরপুর ১১১ টি, বানারীপাড়া ৫২ টি ও মুলাদী উপজেলা ৫৪ টি ঘর নির্মানের তালিকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। এছাড়া মেহেন্দিগঞ্জ ৮৫ টি, আগৈলঝাড়া ৬৮ টি, বাবুগঞ্জ আরো ৬৯ টি ঘর নির্মানের তালিকা সম্পন্ন করেছে। আর গৌরনদী উপজেলা এখনও তালিকা সম্পন্ন করতে না পারলেও সেই সংখ্যা প্রায় ৩’শ হতে পারে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বরিশাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতিক বলেন, অসংখ্য বীর মক্তিযোদ্ধা যারা কিনা ভূমি ও গৃহহীন অবস্থায় আছেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের পূনর্বাসিত করা হচ্ছে। এর চেয়ে ভাল কাজ আর হতে পারেনা। বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা দিয়েছিলেন এদেশে কোন গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার থাকবেনা। সেই অনুযায়ী এরই মধ্যে গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য জমি ও ঘর বরাদ্ধ দিয়েছেন তিনি। এবার তিনি অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদাভাবে প্রকল্প তৈরী করে গৃহ নির্মান কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বরিশালে প্রথমধাপের তালিকা চুরান্ত করে ঘর নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। ঘর প্রদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় ধাপের থালিকাও প্রস্তুতের কাজ চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে কোন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ না পড়ে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘর দেয়ার পাশাপাশি আড়াই লাখ টাকা ব্যায়ে কবর স্থান নির্মান করে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জেলা প্রশাসক হিসেবে তাকে অসাধারণ এই কাজ করার সুযোগ করে দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মান এ প্রকল্প চলমান থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।