বিশেষ প্রতিবেদক
একসময় বরিশাল তথা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের মাঠ কাঁপিয়ে বেড়ানো দুর্দান্ত খেলোয়াড় ও ক্রিড়া সংগঠক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক আলমগীর হোসেন আলো আজ বিছানায় শুয়ে একটু একটু করে এগিয়ে চলছেন শেষ গন্তব্যের দিকে। গত ২৩ জুলাই বরিশালে নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে তাকে। সর্বশেষ বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখান থেকে সরাসরি বরিশালে নিজ বাসায় নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো তিনি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বারডেম চিকিৎসক ডাঃ সমীরণ এবং নিউরোলজি ডাক্তার রাশেদুল ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আলমগীর হোসেন আলো এর সহধর্মিণী রাজিয়া বেগম। তিনি জানান, আগের অবস্থাই আছেন। কোনো উন্নতি নেই। রাতে কাশি উঠলে খুব সমস্যা হয়। তখন আর ঘুমাতে পারেন না। তবে এখন কেউ ডাকলে বা কথা বললে সাড়া দেন। বুঝতে পারেন। তবে কিছুই বলতে পারেন না।
রাজিয়া বেগম আরো বলেন, প্রতিদিনই অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী আসেন খোঁজ খবর নিয়ে যান। বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুকও কোরবানির দিন এসে খোঁজ খবর নিয়ে গেছেন। ডিসি, এডিসি, বিভাগীয় কমিশনার, জেলার এসপি সবাই আসেন, খোঁজ খবর নেন। এটা আল্লাহর অসীম দয়া ও রহমত। আমেরিকা থেকে আসার সময় তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ সব ব্যবস্থা করবেন। চলো নিজ দেশের মাটিতে যাই। সত্যি তাকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা আমাকে মোকাবেলা করতে হয়নি। আল্লাহই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই যে আমরা ঢাকা থেকে সিপট হয়ে বরিশালের নিজ বাড়িতে চলে এসেছি এজন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছে ক্রিকেট বোর্ড ও বিসিবির পাপন সাহেব। তাদের কাছে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাজিয়া বেগম।
শনিবার বিকেল চারটায় বরিশালের পলিটেকনিক কলেজ সড়কে আলমগীর হোসেন আলোর বাড়িতে তাকে দেখতে গেলে সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়াঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মিলন এবং বিভাগীয় সভাপতি ক্রীড়াঙ্গনের আরেক কীর্তিমান পুরুষ আসাদুজ্জামান খসরু। তারাও তাকে দেখতে এসেছেন। মিলন ঘুরে ঘুরে দেখান আলোর অর্জিত শতাধিক প্রায় পুরষ্কার ও সনদ। ক্রেস্টগুলো তাকিয়ে আছে আর বলছে আলো’র পরিচয়।
খসরু বলেন, আলো ভাই অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন আজ প্রায় ৭ মাস পার হচ্ছে। আমরা তাকে দেখতে আসছি, কারণ এই মানুষটির বিলিয়ে দেয়া আলোর বিকিরণ আমাদের ছুঁয়ে আছে। বরিশাল তথা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে ছুঁয়ে আছে।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আলমগীর হোসেন আলো বরিশাল জেলা ও বিভাগীর ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত আছেন। ক্রিকেট ছাড়াও তিনি ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। কয়েক মেয়াদেই তিনি ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রীড়াঙ্গনের বহুমুখী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এই সংগঠক গত জানুয়ারি মাসে ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলেকে দেখতে আমেরিকা যান এবং সেখানে নিজেই অসুস্থ হয়ে পরেন। তৎক্ষনাৎ তাকে ডালাসের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়। পরবর্তীতে গত ১ মার্চ তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। কেননা, তিনি কিছুতেই আমেরিকায় থাকতে রাজী হননি। দেশের মাটিতে, দেশের মানুষের মাঝেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান বলে তার সন্তান ও পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এয়ারপোর্ট থেকেই সোজা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়, সেখানে আইসিইউ সংকটের কারণে তাঁকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বারডেমে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল। অবস্থার কোনোরকম অগ্রগতি না হওয়ায় এবং রোগীর চাহিদা বিবেচনা করে ডাক্তারের পরামর্শে আলমগীর হোসেন আলোকে বরিশালে নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে।
মোঃ আলমগীর হোসেন খান আলো বরিশালের বেশিরভাগ মানুষের কাছে আলো ভাই হিসেবে পরিচিত। তরুণ বয়সে তিনি একজন দক্ষ ফুটবলার ছিলেন দাবী করে বরিশালের ক্রিড়া সংগঠক আসাদুজ্জামান খসরু বলেন, ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ও ক্রিকেটে দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন আলমগীর হোসেন আলো। তখন থেকেই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যুক্ত রয়েছেন তিনি, বরিশাল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
খসরু বলেন, যতদূর মনে আছে ১৯৮৮ সালে আলমগীর হোসেন আলো প্রথম বরিশাল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামের এডহক কমিটির সেক্রেটারি হন। ১৯৯২ সালে জেলা ক্রিড়া সংস্থার নির্বাচনে আলো ভাই প্রথম সাধারণ সম্পাদক হন। এই কমিটি ১৯৯৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত গত ২৪ বছর ধরে এডহক কমিটি চলছে। কখনো আলো ভাই, কখনো ফেরদৌস, কখনো আমি সেক্রেটারি। এভাবেই চলছে জেলা। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আলমগীর হোসেন খান আলো প্রথম বিভাগীয় ক্রিড়া সংস্থার সেক্রেটারি হন। তার উদ্যোগেই বিভাগীয় ক্রিড়া সংস্থার নির্বাচন হয়। আমি, সাইদুর রহমান রিন্টু এরা সহসভাপতি হই। ২০১৪ সালে আলমগীর হোসেন আলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হন। ২০১৮ তেও তিনি পরিচালক হয়ে আজ পর্যন্ত দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান আসাদুজ্জামান খসরু। তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি আলমগীর হোসেন আলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনেরও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও বরিশাল বিভাগীয় ক্রীয়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বরিশাল নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বরিশাল পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, হালিমা খাতুন স্কুলের সভাপতি আলমগীর খান আলো।