বিশেষ প্রতিবেদক
বরিশাল মহানগরীতে সিটি কর্পোরেশন এর ড্রেন ও খাল দখলের মহাউৎসবে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খালকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ছোট-বড় ড্রেন ও নালা রয়েছে। যার বেশিরভাগই এখন ভরাট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কতিপয় অসাধু নগরবাসীরাই। সিটি করপোরেশনের যথাযথ তদারকির অভাব ও দায়িত্বহীনতাকেই এজন্য দায়ী করছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গঠন নিয়ে এই মুহূর্তে নগরবাসীর সাথে একটা খেলা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শপথ পড়ানোর পরেও নবনির্বাচিত মেয়র এর দায়িত্ব নিতে এত দেরী কেন? প্রশ্ন তুলে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সুযোগেই নগরী জুড়ে একটি বিশৃঙ্খলা চলছে। খাল- ড্রেন দখল হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন সড়ক। সার্কিট হাউসের ১০০ গজের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এনায়েত হোসেন শিবলু, বরিশাল সাহিত্য সংসদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, সচেতন নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা শাহ সাজেদা সহ অনেকেই। তারা এসময় নতুন করে ৫০০ সিএনজি অনুমোদন বিষয়ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নগরীর যানজট নিরসনে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী করেন নেতৃবৃন্দ ।
সরেজমিনে ৩১ জুলাই নগরী ঘুরে দেখা গেছে, ২৩ নং ওয়ার্ড সাগরদি খালের দুপাশে অবৈধ ভাবে ক্লাবঘর ও সাবেক কাউন্সিলরের অফিস দাঁড়িয়ে আছে খাল দখল করে। রয়েছে বেশকিছু বাড়ির রান্নাঘর বা টয়লেট। ১৩ নং ওয়ার্ড আমতলা মোড়ে মডেল মসজিদ সংলগ্ন দেয়াল ঘেঁষে বহমান ড্রেন বন্ধ করে নার্সারি ও আওয়ামী লীগ অফিস এবং নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডে জব্বার মিয়ার গলিতে রীতিমতো ড্রেনের উপর দেয়াল তুলে বাড়ি নির্মাণের জোর প্রতিযোগিতা চলতে দেখা গেছে। এখানের সড়কে জলাবদ্ধতা যেন স্থায়ী হয়ে গেছে।
বরিশালের নদী গবেষক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা রফিকুল আলম বলেন, সর্বশেষ গত ২০১০ সালেও ১৩টি খাল জীবিত ছিলো। এখন সাতটি খাল পুনরুদ্ধারের জোর প্রতিশ্রুতি শুনছি, তবে কোনো কার্যক্রম চোখে পরেনি আজো। ১০ নং ওয়ার্ডের একটি খাল ছিলো যা এখন ড্রেন। নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে বলেই সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে নগরীতে যানজট নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আরো ৫০০ সিএনজি অনুমোদন দিচ্ছে যা শুধুমাত্র নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য জানিয়ে সামাজিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, এমনিতেই নগরীতে প্রায় পনের হাজার অবৈধ যানবাহন চলছে। আজো অটোরিকশার দ্রুত গতিতে আহত হয়েছে জিলা স্কুলের একজন ছাত্র। জিলা স্কুলের সামনেই একটি খাল ছিলো যা এখন ড্রেন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ঐ ড্রেনের উপর কতগুলো ঘর নির্মাণ হয়েছে? তা কি সিটি করপোরেশন দেখেনা?
বরিশালের জিলা স্কুলের প্রধান ফটকের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া একটি সরু গলির পুরোটাই ড্রেন। আর এই ড্রেনের উপরেই দিব্বি দোতলা ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে সিটি করপোরেশনেরই একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। এদিকে ১০ নং ওয়ার্ডের জব্বার মিয়ার গলিতে হোল্ডিং ২৯ বাড়ি সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের ড্রেনের উপর নতুন ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা বাহাউদ্দীন স্বপন নামের বাড়িওয়ালা।
এলাকবাসী কয়েকজন জানালেন, এটি একটি খাল ছিলো বেশ বড় পরিধি ছিলো। ২০০৩-৪ সালের দিকে মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার এটিকে সংস্কার করে ৭-৮ ফিট ড্রেন তৈরি করে দু’পাশে ঢালাই করে দেন। পর্যায়ক্রমে ছোট হতে হতে এখন ড্রেনটি প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে যাচ্ছে।
এসময় বাহাউদ্দীন স্বপন এর প্রতিবেশী ২৯ নং হোল্ডিং এর বাসিন্দা খান শাহীনুল হক বলেন, এই এলাকার প্রায় ১০০ পরিবারের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এই ড্রেন নির্ভর। এটি পুলিশ লাইন খাল ও ডিসিখালের সাথে গিয়ে মিশেছে।
তিনি বলেন, এই বাড়ির কাজ সম্পন্ন হলে এই ড্রেনের আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তার দেখানো পথে ড্রেনটির কাছে গেলে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই প্রায় ভরাট হবার উপক্রম ড্রেনটি।বাহাউদ্দীন স্বপন এর বাড়িটির দেয়াল ড্রেনের উপরে গাঁথা হয়েছে। নীচে ড্রেনের জন্য সামান্য ফাঁকা রাখা হলেও উপরে ভবনের কার্ণিশ ড্রেনের সীমানা অতিক্রম করেছে। খুব শীঘ্রই যে এই ড্রেনটি অস্তিত্বহীন হবে এবং সংকটে পরবে এলাকাবাসী তা নিশ্চিত বলা যায়।
এ বিষয়ে ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদুল্লাহ্ কবীর বলেন, বিষয়টি শুনেছি, অভিযোগও পেয়েছি। কিন্তু বিষয়টি আসলে সিটি করপোরেশনের রোড ইনস্পেক্টর (আরআই) এর দেখার কথা। আমি অভিযোগ পাওয়া মাত্র বাড়ির মালিক বাহাউদ্দীন স্বপনকে ডেকে সতর্ক করেছি। তিনি বলেছেন, ড্রেনের কোনো ক্ষতি হবেনা।
যদিও বাড়ির মালিক বাহাউদ্দীন স্বপন বলেন, এটি সিটি করপোরেশনের ড্রেন হলেও এটি আমার রেকর্ডিও সম্পত্তির অংশ। আমরাই ড্রেনের জন্য জায়গা দিয়েছি। তারপরও ড্রেনের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেভাবেই বাড়ি নির্মানের কাজ হবে বলে জানান তিনি।
যদিও বাস্তবতা ও ছবি বলছে ভিন্ন কথা।
তবে এ বিষয়ে কথা বলা বা নকশা দেখার জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের আরআই ও জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসকে ফোন করা হলে তারা কেউই ফোন ধরেননি।
সিটি করপোরেশনের সিইও ফারুক আহম্মেদ জানালেন, তিনি এখনই আরআই পাঠিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।