টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে আছেন বাঙালির হৃদয় থেকে বিশ্ব মানুষের হৃদয়ে তার কর্মের মাধ্যমে। মানুষের জন্ম যেখানে হোক না কেন কর্ম মানুষকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলে। বঙ্গবন্ধু তার পঞ্চান্ন বছরের জীবনে রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কাছে এমন একটি আদর্শিক স্থানে অবস্থান করে নিয়েছেন যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তার আদর্শ আমাদের লালন করতে হবে আমাদের প্রয়োজনে। আজকে শুদ্ধাচারের রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে আর এই শুদ্ধাচারের রাজনীতির দর্শন পাওয়া যাবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আদর্শ চর্চার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদেরকে একটা মানচিত্র, পতাকা, দেশ দেননি তিনি আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আমদেরকে অন্যায়, অবিচার, শোষন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে অধিকার আদায়ের পথ দেখিয়েছন। অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধৈর্য ও সাহসের সাথে লড়াই করার শক্তি যুগিয়েছেন। তার ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির অনুপ্রেরক হিসেবে কাজ করছে। তিনি তার ভাষণে বলেছেন বাঙালিকে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবে না। তার কথা সত্যি বাঙালিকে আজও কেউ দাবাইয়া রাখতে পারছে না, যতই ষড়যন্ত্র হোক বাঙালির বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বাঙালি বিজয় অর্জন করেছে।
বাঙালিকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছে কিন্তু অদম্য বাঙালি জাতি দমে যাওয়ার পাত্র নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উজ্জীবিত সৈনিকরা অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় লাভ করেছে এবং বাংলার মাটিতে খুনীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। শুধু বঙ্গবন্ধুর ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী খুনিদের বিচার নয় একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামস যারা স্বাধীনতার বিরোধীশক্তি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষ হয়ে বাঙালি নিধনে, খুন ধর্ষণে ব্যস্ত ছিল তাদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। বাঙালি আজ অর্থনৈতিক, সামজিক, সাংস্কৃতি, খেলাধুলা, জ্ঞানবিজ্ঞান সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রক্ত দিয়েছি প্রয়োজনে আরো রক্ত দিব, তবুও বাংলাকে মুক্ত করে ছাড়ব। তার এই কথায় বাঙালি নিস্বার্থভাবে রক্ত দিয়ে শুধু বাংলার স্বাধীনতা নয় বাংলাদেশকে স্বৈরশাসন মুক্ত করেছে। বঙ্গবন্ধু শুধু দেশ নয় আমাদেরকে একটা সংবিধান দিয়েছেন। সংবিধান রচনার দিক নির্দেশনা নেপথ্যে থেকে তিনি দিয়েছেন। তিনি বাঙালির মুক্তির জন্য যখন থেকে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের রূপরেখা তৈরি করেন। এজন্য ১৯৫২ সালে চীন সফর করেন, সেখান সমাজতন্ত্রের বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক সামাজিক পরিবর্তন দেখেছেন এবং সেইসাথে ব্রিটেন সহ বিভিন্ন গণতন্ত্রিক দেশ সফর করে গণতন্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা দেখেছেন।
আমাদের জাতির উন্নয়নের জন্য তাই তিনি গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের দর্শন আত্মস্ত করেছেন। যেই সংবিধান আমাদেরকে একটা অসাম্প্রদায়িক জাতিতে রূপান্তরিত করেছে। পৃথিবীতে মাওবাদ, লেনিনবাদ, মার্কসবাদ সমাজতন্ত্রের বিভিন্ন মতবাদ আছে আর বঙ্গবন্ধুর মতবাদ ছিল যা গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণে এক মতবাদ যার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার, সকল ধরনের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত এবং শোষনহীন সমাজ ব্যাবস্থা কায়েম করা। এজন্য তিনি সংবিধানে গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র সন্নিবেশিত করেছিলেন। তিনি তার লালিত দর্শন বাস্তবায়নের জন গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মিশ্রণে বাকশাল নামক রাজনৈতিক কর্মসূচীর উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু দেশি এবং বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। তার বাকশাল কর্মসূচী বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশে এতো সামাজিক বৈষম্য থাকত না, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক সকল ক্ষেত্রের ভিত হতো মজবুত এবং বাংলাদেশ হতো একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শূন্য ভান্ডার নিয়ে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তার দেশপ্রেম এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার হয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পূর্বে অর্থনীতির অবস্থান চীনের কাছাকাছি ছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অবস্থান ছিল সবচেয়ে ভালো আর তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মালেশিয়ার সমান। তিনি সত্যিকারের একজন আদর্শিক গণতন্ত্রমনা ছিলেন যার জন্য তিনি ১৯৬৬-এর ছয় দফার অন্যতম দফা ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র পদ্ধতির সরকার চালু করা আর এজন্য দেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি দায়িত্বশীল শাসন ব্যাবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির সরকার চালু করেন।
রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের কমিটমেন্ট জনগণের কাছে নেতৃবৃন্দকে অনেক শ্রদ্ধেয় করে তুলে তেমনি বঙ্গবন্ধুকে জাতিকে তার রাজনীতির মাধ্যমে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন। তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষায় মর্যাদা লাভ করে, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন এবং ১৯৬৬-এর ছয় দফার অন্যতম দাবি সংসদীয় গণতন্ত্র দেশ স্বাধীনতার পরে তার বাস্তবায়ন। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন নেতৃত্বে দৃঢ়তা, আপোসহীন, কঠোর এবং মানবিক হতে হবে। আবার পাশাপাশি রাজনীতিবিদকে দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। তাইতো ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল বিশেষ করে নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ এইসব অঞ্চলে, মানবিক বঙ্গবন্ধু এসব অঞ্চলের দুর্গত মানুষের পাশে ত্রাণ সাহায্য নিয়ে রাতদিন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়েজিত রেখেছেন। কিন্তু নির্বাচনের প্রাক্কালে মওলানা ভাষানী ছিলেন নির্বাচনের বিপক্ষে। তিনি বলেছিলেন ভোটের আগে ভাত দে ভোটের বাক্সে লাথি দে। কিন্তু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা মুজিব নির্বাচনের পক্ষে অটল ছিলেন, তার এই অবিচল দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণে নির্বাচন হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে এবং পরবর্তীতে সেই নির্বাচন বাঙালির স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর দীর্ঘদিন সামরিক শাসন ছিল মানুষের প্রত্যক্ষ ভোটের ব্যাবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খান থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটের ব্যবস্থা আদায় করেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে আত্মঅধিকার, আত্মসম্মান, প্রতিবাদী জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে প্রাণসঞ্চার করেছেন। একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ, ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই, খাতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে খাওয়ার ব্যাবস্থা করেছেন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়ন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ড. কুদরত-ই খুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন যার মধ্যে প্রাথমিক স্তরে সাধারণ শিক্ষা, যষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপশি কারিগরি শিক্ষা এবং নবম থেকে মেধা যাচাই করে ছাত্রছাত্রীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে জাতির সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন; যাতে মেধার অপচয় না হয়। আমাদের কৃষি নির্ভরশীল দেশ। সেজন্য তিনি কৃষি শিক্ষার ওপর জোর দেন যার জন্য আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আধুনিক বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে ড. কুদরত-ই খুদার শিক্ষা কমিশনের যাওয়ার কার্যক্রম ৭৫ পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করেননি। কুটনৈতিক ক্ষেত্রের বঙ্গবন্ধু সফল ছিলেন তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে, পাকিস্তানের বিরোধীতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্যপদ লাভ করে, জতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন এবং তিনি প্রথম বাঙালি যিনি বাংলা ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ছিল সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়। সেই ভিত্তিতে বাংলাদেশকে জোট নিরপেক্ষ সংস্থার সদস্য করেন। বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ হয়েও একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। তিনি ইসলাম শিক্ষা প্রসারের জন্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোডের্র পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করেছেন। ইসলামের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেন। টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার মাঠের জায়গা দেন এবং তবলীগের লোকজনের জন্য ঢাকায় কাকরাইলে রমনা পার্কের পাশে মসজিদ করার জন্য জায়গা দিয়েছেন। সেখানে কাকরাইল মসজিদ স্থাপিত হয়েছে। তিনি কত বড় মুসলমান তার প্রমাণ হল তিনি পাকিস্তানিদের বলেছিলেন আমি প্রথমে একজন মুসলমান তারপর আমি একজন বাঙালি মুসলমান একবারই মরে। আরেকটি উদাহরণ- পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন তোমরা যে কোনো কাজের সফলতা লাভের জন্য ইনশাল্লাহ বলবে। তিনি ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ইনশাল্লাহ বাংলাকে মুক্ত করে ছাড়ব। সৌদি আরবের সাথে আমাদের তখন কুটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও কুটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষের হজের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি দেশে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করছেন এবং কোরআন, সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো আইন করা যাবে না যা তিনি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এতো গভীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন বাঙালি তাকে তাদের মুক্তির দিশারি ভাবে।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুথানের পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমদ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করেছেন। পৃথিবীতে শোষিত নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু। জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন বিশ্ব আজ দুটি শিবিরে বিভক্ত শোষক এবং শোষিত, আমি শোষিত মানুষের পক্ষে। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষ তাদের পক্ষে কথা বলার নেতা পেয়েছেন এজন্য তিনি বিশ্বের নিপীড়িত মানুষ তাকে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাইতো জাতিসংঘ আজ বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু উপাধি প্রদান করেছে। বঙ্গবন্ধু ছোটোবেলা থেকেই ছিলেন একজন মানবপ্রেমিক এবং সামাজিক মানুষ। মানুষের বিপদে-আপদে তিনি পাশে দাঁড়াতেন এবং নিজের সাধ্যমতো মানুষের উপকার করতেন। ১৯৪১ সালে দেশে যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় বঙ্গবন্ধু নিজের থেকে সাধ্যমতো মানুষকে দিয়েছেন এবং পরে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা, চাল সহ যা পেয়েছেন তা দুর্গত মানুষকে দিয়েছেন। তিনি রাজনীতির ক্ষমতা এবং ক্ষমতার বাইরে যেখানেই ছিলেন তার কাছে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেননি। দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তানীদের হাতে ধর্ষিতা রমনীদের সন্তান পিতৃ পরিচয়ের অভাবে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু সেই রমনীদের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং বললেন তারা আজ থেকে আমার মেয়ে, এদের সন্তানদের অভিভাবক আজ থেকে আমি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুবান্ধব এবং কর্মীবান্ধব। তিনি তার জন্মদিন শিশুদের নিয়ে গণভবনে অনারম্বরভাবে পালন করতেন।
দেশের শিশু বিকাশের জন্য শিশু একাডেমি করেন এবং দেশের শিশু সদনগুলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে এনে এতিম অসহায় শিশুদের শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে তার কর্মীদের ছিল অবাধ প্রবেশ। একবার চট্টগ্রামে তিনি এক জনসভায় গেলে ইছহাক নামে তার কর্মী তার সাথে দেখা করতে চাইলে পুলিশ বাঁধ সাধে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন ছেড়ে দাও এগুলো আমার কবুতর, আমার পাশে থেকে বাকবাকুম করবে। এভাবে নেতা-কর্মীরা তাকে ঘিরে এবং তিনি তাদেরকে ঘিরে বেঁচে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে এতো বিশ্বাস করতেন, ভালোভাসতেন তাই তিনি সাধারণ মানুষের কাছে থাকার জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামান্য নিরাপত্তাবেষ্টিত বাড়িতে বসবাস করেছেন। তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাকে বারবার অনুরোধ করেন বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি যাননি, তিনি তার ব্যাক্তিগত বাসভবনেই বসবাস করেছেন। সাধারণ গ্রামের এক অজপাড়াগাঁয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া বঙ্গবন্ধু সাদামাটা জীবনযাপন পছন্দ করতেন। তিনি তার সন্তানদেরকেও সেভাবে গড়ে তুলেছেন। ভোগবাদী এবং বিলাসবহুল জীবন এবং ধনসম্পদের মোহ তার ছিল না। তিনি বাঙালিকে অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন এবং ভালোবাসতেন। কারণ এই বাঙালি তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছেন।
সারা জীবন বাঙালির জন্য সংসার, ছেলেমেয়ে স্ত্রী সবাইকে রেখে রাজনীতির মাঠে অথবা জেলে কাটিয়েছেন। তার জীবনের বিরাট অংশ জেলে কেটেছে। পরিবারের সঙ্গে বেশিরভাগ ঈদ এবং পারিবারিক বিভিন্ন উৎসব করা সম্ভব হয়নি জেলে থাকার কারণে। সারাটা জীবন শুধু বাঙালি বাঙালি করে কাটিয়েছেন। আর এজন্য বাঙালির ওপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। কিন্তু কিছু মোনাফেক, বেঈমান, ক্ষমতালোভী, পাকিস্তানীদের পোষ্য জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কর্ম, দর্শন, আদর্শ বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখবে বাঙালির হৃদয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।