১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ১১:১৯

আজ ১৭ আগস্ট, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ভয়াল দিন…

আহমেদ রুবাইয়াত ইফতেখার বাবু
  • আপডেট সময়ঃ বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৩,
  • 210 পঠিত

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওইদিন সকাল সাড়ে বেলা ১১-১১:৩০ এর মধ্যে মধ্যে দেশের ৬৩ জেলার প্রেসক্লাব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ঢাকার ৩৪টিসহ সাড়ে ৪শ’ স্পটে প্রায় ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এই হামলায় নিহত হন ২ জন এবং আহত হয় দু’শতাধিক মানুষ!

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) যুগপৎ বোমা হামলা চালিয়েছিল জেএমবি।
সিরিজ বোমা হামলা করতে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। ফান্ডের বেশির ভাগ টাকা এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে। বাকি অর্থ যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে জোগান দেওয়া হয়েছিল।
অবশ্য ২০০১ সালের আগেই বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার বিস্ময়কর উত্থান হয়! ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, অগ্রযাত্রা’য় অগ্রদূত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ভয়ংকর নজির!

২০০৫ সালের আগস্ট মাসের ১৭ তারিখে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ, নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ ও আহত মানুষের কান্নায় ক্ষোভ ও ঘৃণা আরো তীব্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বোমা হামলার ভয়ংকর ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর সমাবেশে এক বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন।
একই বছর ৮ অক্টোবর খুলনার নিরালা এলাকায় অবস্থিত কাদিয়ানিদের উপাসনালয়ে বোমা বিস্ফোরণে আটজন নিহত হন।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ছয়জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন।
১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১১ জন।
৩ জুন বোমা হামলায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় নিহত হন ১০ জন; আহত হন ১৫ জন।
সিলেটে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া নিহত হন গ্রেনেড হামলায়। ২০০৪ সালের ২১ মে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেন; যিনি বাংলাদেশি সন্তান।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে, অফিসে, নেতার গাড়িতে, সিনেমা হলে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। তৎকালীন সরকার জঙ্গিবাদ উত্থানে সহায়ক হয়ে উঠেছিল; ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় খালেদা-নিজামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আরো স্পষ্ট হয়েছে। অথচ সে সময় গণমাধ্যমের তরফ থেকে সর্বহারা নিধনের নামে দেশে ভয়াবহ জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে বলে বলা হয়। সেই জঙ্গিবাদের শীর্ষ নেতা জেএমবির বাংলা ভাই বলেও জানানো হয়। এ সময় তৎকালীন সরকারের তরফ থেকে বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াতের মদদে সংগঠিত হয়ে ওঠা জেএমবি সারা দেশে তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় মুন্সীগঞ্জ জেলা বাদে দেশের ৬৩ জেলায় সকাল ১১টায় সিরিজ বোমা হামলা চালায়। দেশের ৩০০ স্থানে মাত্র আধাঘণ্টার ব্যবধানে একযোগে ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে দুজন নিহত ও দুই শতাধিক লোক আহত হয়। হামলা চালানো হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি-আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে।

জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার কারনে বিএনপি নেতা ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী আলমগীর কবির, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা ও শীষ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৩১ বছরের সাজা হয়েছিল।

১৭ আগস্টের হামলার কিছুদিন পর আবার শুরু হয় ধারাবাহিক হামলা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের জেলা আদালতে বিচারকাজ চলাকালে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এজলাসে ঢুকে বিচারককে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারা হয়। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর সিলেটের দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীকে হত্যা করতে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর ঝালকাঠি শহরের অফিসার্স পাড়ায় জাজে’স কোয়ার্টারের সামনে বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে শক্তিশালী বোমা হামলা করে ঝালকাঠি জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাঁড়েকে হত্যা করে জেএমবি। একই বছরের ৩০ নভেম্বর গাজীপুর ও চট্টগ্রাম আদালতে পৌনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে আত্মঘাতী জেএমবি সদস্যরা গায়ে বোমা বেঁধে হামলা চালায়। এতে দুই জঙ্গি সদস্যসহ ৯ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলা আদালতে চায়ের ফ্লাস্কে করে বোমা হামলা করে সাতজনকে হত্যা ও অর্ধশত ব্যক্তিকে আহত করে জেএমবি।

সিরিজ বোমা হামলার আসামিরা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুললেও তাদের অনুসারী ও মদদদাতারা এখনো সক্রিয়। ২০১৬ সালের হলি আর্টিজানের হত্যাযজ্ঞ তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও থেমে নেই উগ্রপন্থীদের কার্যক্রম বরং গোপনে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি চালাচ্ছে তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে তাদের সবারই বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৫ জুন ২০০৭ সালে দৈনিক পত্রিকা থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজন জেএমবি সদস্য অতীতে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তা ছাড়া আল-কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্টসহ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক বহুদিনের। পৃথিবীব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সংগঠনগুলো মনে করে, জামায়াত-শিবিরসহ অনেক জঙ্গি সংগঠন তাদের পক্ষে রয়েছে।

সাম্প্রদায়িক ও অনগ্রসর-পশ্চাত্পদ দৃষ্টিভঙ্গির চূড়ান্ত পরিণতির নাম জঙ্গিবাদ। দেশ থেকে অপরাজনৈতিক তৎপরতা চিরতরে দূর করতে হবে। এ দেশের জঙ্গিবাদের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান/জিয়া সহ উগ্রবাদিতার অন্য পৃষ্ঠপোষকরা লন্ডন, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে আছে। এদের সবাইকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জঙ্গিবাদের করালগ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে সক্ষম হবে।

আহমেদ রুবাইয়াত ইফতেখার (বাবু)

সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...

এই বিভাগের আরো সংবাদ...
© All rights reserved © ২০২৩ স্মার্ট বরিশাল
EngineerBD-Jowfhowo