একটি ঘড়ি ও আধখানা সাক্ষাৎকার
-মনদীপ ঘরাই
-একা সময়ে আপনি কী করেন?
-ঘড়ি দেখি।
-মানে?
-ঘড়ি দেখি।
-এটা আবার কেমন কথা!
-ঘড়ি তো মানুষ সময় দেখার জন্য দেখে।
-আমি সময় কাটানোর জন্য দেখি।
-একঘেঁয়ে ঘড়ি দেখে সময় কাটে?
-জীবনটাই তো ঘড়ির মতো। একই চক্রে ঘোরে।নতুন নতুন এমন কী ই বা হয়?
-তা কেমন?
-একটু খুলেই বলি আপনাকে।
শিক্ষাজীবনে বছর ঘুরে পরীক্ষা আসে।
চাকরি জীবনে মাসঘুরে বেতন;
আর যার শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা কোনোটাই নেই…
তার দিন ঘুরে আসে হতাশা ।
একই ক্রিকেট,একই ফুটবল দিনের পর দিন দেখে চলেছেন।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই খাবার মুখে তুলছেন…
নিজের একই চেহারা বয়ে চলেছেন দিনের পর দিন।
আর দিন?
সে তো ঘড়ির কাঁটার সাথে শুরু হয়;
ঘড়ির কাঁটাতে শেষ।
তাই খুব যখন একলা থাকি;
ঘড়ির কাটাতে চোখটা রাখি।
যখন বাসায় বিদ্যুৎ থাকে না…
টিভি, ফ্যান এসিও বন্ধ হয়ে থাকে;
যখন মোবাইল চার্জ শূণ্য হয়ে জানিয়ে দেয়;
তোমার আঙ্গুলের নির্যাতন আর নিতে পারছি না…
তখনও ঘড়ি চলতেই থাকে।
আরে, আমি যখন রাতে ঘুমাই;
ঘড়ি তখনও ঘুমায় না।
আমার কাছে ঘড়ির টিকটক শব্দ অনেকটা- হৃদস্পন্দনের মতো।
কাঁটার ঘুরে চলাটা দেয় গতির আবেশ।
তাই আমি ঘড়ি দেখে সময় কাটাই;
“সময়” দেখে সময় কাটাই।
-ব্যাপারটা কেমন যেনো হলো না?
-কেমন আবার হবে? আমি তো তবু সময় দেখে সময় কাটাই;বাকিরা…
সময় দেখে না: অথচ সময় কেটে যায়।
ব্যাটারি ফুরোনো ঘড়ির মতো জীবন থেমে যায়।
আমরা দৌঁড়ে গিয়ে ঘড়ির ব্যাটারি কিনে এনে,
ঘড়ির পুরাতন গতি আর ছন্দ ফেরাই;
শুধু…
চলে যাওয়া মানুষ ফেরাতে পারিনা।