কতটা অমানবিক হতে পারেন একজন চিকিৎসক? তার অনন্য নজির উপস্থাপন করেছেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শেবাচিম এর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ মহসিন। তার গাড়ির উপর একটি রিক্সা উল্টে পরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সেই রিক্সাচালক জামাল কে আটকে রেখেছেন তিনি। বরিশাল নগরীর রসুলপুর বস্তির বাসিন্দা জামালের বয়স ৮০ এর বেশি। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী ও মেয়ে। নিজে অসুস্থ হয়েও জীবীকার প্রয়োজনে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। সারাদিন উপোস বৃদ্ধ গতি সামলাতে না পেরে সামনের রিকশার সাথে বাড়ি খেয়ে উল্টে পরে তার রিকশা। তিনি চাপা পরেন রিকশার নীচে। পাশ দিয়ে চলমান একটি কালো রংয়ের প্রাইভেট কারে আঘাত করে তার উল্টে পরা রিকশাটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাড়িটার পিছনের ব্যাম্পার, কিছুটা আঁচড়ও লেগেছে গাড়ির গায়।। সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন গাড়ির মালিক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মহসিন। এসেই তিনি রিকশা ও বৃদ্ধকে পুলিশ দিয়ে আটকে নিয়ে আসেন ফাঁড়িতে। কিডনী বিক্রি করে কিম্বা ছেলে মেয়েকে বন্ধক রেখে হলেও গাড়ির ক্ষতিপূরণ চান তিনি। এজন্য তিনঘণ্টার বেশি আটকে রাখায় ছুটে এসেছেন মানবিক নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীসহ সাংবাদিকরাও।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে বরিশাল নগরীর বটতলা মোড় এলাকায়। বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এসআই নুরুজ্জামান বলেন, ট্রাফিক পুলিশের ডাকে আমরা ছুটে যাই। সেখানে তখন হুলস্থুল অবস্থা। আশেপাশের অনেক মানুষ এসে ডাক্তারের কাছে অনুরোধ করছিলেন বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষটিকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু ডাক্তার তা শুনতে না নারাজ। তাই বাধ্য হয়ে আমরা তাকে ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে এসেছি। গাড়ি ও রিকশা, দুটোই ফাঁড়িতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
গাড়ির চালক সোহেল বলেন, দ্রুত গতির কারণে বৃদ্ধ তার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নাই। সামনে থাকা অন্য একটি রিক্সার উপর তুলে দেন। এতে রিক্সাটি উল্টে গাড়ির উপর পড়ে যায়।
একই কথা বলেন বয়োবৃদ্ধ রিকশাচলক জামালও। তিনি আরো জানান, ঘরে তার অসুস্থ স্ত্রী ও মেয়ে আছে। ছেলে সাগর খেয়ানৌকা চালায়। তার উপার্জনে সংসার চলেনা, তাই বাধ্য হয়ে এই বয়সেও রিকশা নিয়ে নেমেছেন। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল বৃদ্ধের। জানা গেল সারাবেলা উপোস তিনি। পুলিশ সদস্যরা তাকে হালকা কিছু খেতে দিয়েছেন।
এসময় আশেপাশের অনেক মানুষের ভিড়। সকলের মুখে একই অভিযোগ, কেমন ডাক্তার তিনি, গাড়ির ক্ষতি বড়োজোর হাজার বিশেক টাকা সর্বোচ্চ হবে। এজন্য একটা মানুষকে তিন-চার ঘন্টা আটকে রেখেছেন, বলছেন, কিডনি বিক্রি করে হলেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ডাক্তার মহসিন এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। তিনি তখন বৃদ্ধের ছেলেকে বলছেন, তুমি আমার সাথে চল, বাসায় কাজ করে টাকা পরিশোধ করবে।
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ কলোনির বাসিন্দা ডাক্তার মহসিন হাওলাদার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলে জানা গেছে, তিনি অত্যন্ত সৎ ও দক্ষ একজন চিকিৎসক। তবে বদরাগী হিসেবে পরিচিত সবার কাছে।