গত ২৫ আগস্ট রাতে পটুয়াখালীর বাউফলের মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সেলিম গাজীর বলাৎকারের শিকার মাদ্রাসা ছাত্র মো. রাফি (১৩) এর মৃত্যু ঘটে। মৃতের বাবা. রেজাউল করিম আকন ২৭ আগস্ট বাউফল থানায় মামলা করেন। যার মামলা নং-১৬। এদিকে বরিশালের মুলাদিতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে একজনকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে গত ১৭ আগস্ট মুলাদি থানায় ৩ জনকে আসামি করে মামলা (মামলা নং ৮) দায়ের করেন মৃতের মা সূর্যবাণ বেগম। দুটি ঘটনার আসামিরা পলাতক হলে ঘটনার তদন্তে নামে বরিশাল র্যাব ৮ এর সিপিএসসি টিম।
২৮ আগস্ট সোমবার দুপুরে বরিশালে র্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিম লিডার র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান জানান, তারা পৃথক অভিযান চালিয়ে দুটি ঘটনায় প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের আটক করে আইনের আওতায় আনতে পেরে তারা নিজেরা যেমন শান্তি পাচ্ছেন, তেমনি সাধারণ জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন র্যাব অপারেশন পরিচালক মেজর জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সিনিয়র এডি রবিউল ইসলামসহ সিপিএসসি সদস্যরা।
দুটি ঘটনার জন্য পৃথক পৃথক বিবৃতিতে অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বাউফল উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের আসামি প্রধান শিক্ষক সেলিম গাজীকে তারা পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানাধীন গুয়ারেখা ইউনিয়নের বরতকাঠি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছেন। আসামী মোঃ সেলিম গাজী, বাউফল উপজেলার বড় ডালিমা মদিনাতুল উলুম কওমিয়া হাফিজিয়া ও নুরানী কিন্ডার গার্ডেন মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। সে গতবছর ২৩ অক্টোবর মাদ্রাসা ছাত্র আল রাফিসহ শিক্ষক এবং সকল শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা শিক্ষা সফরে যায়। শিক্ষা সফরে অবস্থানকালে রাতে প্রধান শিক্ষক সেলিম গাজী তার যৌন কামনা চরিতার্থ করতে বলপূর্বক রাফির সাথে যৌন সঙ্গম করে। পরবর্তীতে আসামী মোঃ সেলিম গাজী (৩৮) মাদ্রাসা ছাত্রটিকে বিভিন্ন সময় তার রুমে ডেকে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার যৌন সঙ্গম করে এবং কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রাখে। গত ০২ আগস্ট সন্ধ্যায় ঐ ছাত্র রাফি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরবর্তীতে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকাস্থ ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল হতে চিকিৎসা শেষে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রাফিকে ১৩ আগস্ট মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে সাতটায় রাফি মৃত্যুবরণ করে।
এ ঘটনায় রাফির পিতা বাদী হয়ে পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(২) আইনে একটি মামলা দায়ের করলে আসামি পালিয়ে যায়। ঘটনার তদন্তে নামে র্যাব-৮, সিপিএসসি টিম। তারা গোপন সংবাদে জানতে পারেন বাউফলের মাদ্রাসা ছাত্র ধর্ষক মামলার প্রধান ও একমাত্র আসামী মোঃ সেলিম গাজী (৩৮) পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানাধীন গুয়ারেখা ইউনিয়নের বরতকাঠি এলাকায় অবস্থান করছে। র্যাব-৮, সিপিএসসি এর একটি দল কৌশলে অভিযান চালিয়ে ২৭ আগস্ট রাত ২ টার সময় ঐ এলাকা হতে ধর্ষক সেলিমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এদিকে গত ১৫ আগস্ট দুপুর আনুমানিক দুপুরে বরিশাল জেলার মূলাদী থানাধীন ৩ নং সফিপুর ইউনিয়নের মাছুয়া খালী (উত্তর চরপদ্মা) এলাকায় পূর্ব শত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। ঐ ঘটনায় রায়হান সরদার (৩২), পিতা-মৃত আঃ রহিম সরদার নিহত হন। এ ঘটনায় ১৭ আগস্ট নিহতের মা মোসাঃ সূর্যবান বেগম (৫০) বাদী হয়ে মুলাদী থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতা এবং জমি জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে একই এলাকার, একই বংশের (চাচা ও ভাইস্তা) এবং একই সম্পত্তির ওয়ারিশ মোঃ ইয়াছিন সরদার (১৯), (পিতা-মোঃ করিম সরদার) মোঃ করিম সরদার (৫০), (পিতা- মৃত কালু সরদার) এবং মোসাঃ সাফিয়া বেগম (৪৫), (স্বামী- মৃত করিম সরদার) সাং-মাড়ুয়া খালী (উত্তর চরপদ্দা ) পোঃ-চরপদ্মা, থানা-মুলাদী, জেলা বরিশাল।
আসামীরা নিজেদের বাড়িতে গত ১৫ আগস্ট দুপুর আনুমানিক আড়াইটার সময় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রায়হান সরদার ও তার ভাই মোঃ ইমরান সরদারকে পায়ে, পিঠে এলোপাথারি কোপাতে থাকে। এতে রায়হান সরদার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার ভাই ইমরান সরদারকে গুরুতর আহত অবস্থায় গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রেরণ করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে মোঃ ইমরান সরদার হাসপাতালে চিৎসাধীন রয়েছে।
এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব ৮ (সিপিএসসি ক্যাম্প) গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান অধিনায়ক। তিনি বলেন, আমাদের তদন্তে দেখা যায় যে, হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছে। গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক পৌনে একটায় র্যাব-৮ এবং র্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে ঢাকা মহানগরের বংশাল থানাধীন এলাকা হতে প্রধান দুইজন আসামী মোঃ ইয়াছিন সরদার (১৯) ও মোঃ করিম সরদার (৫০)কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দুটি মামলার গ্রেফতারকৃতদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পটুয়াখালীর বাউফল ও বরিশাল জেলার মুলাদী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।