বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির রিডিংরুমে চরম আসন সংকটের কারণে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। নয় হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে রিডিংরুমে সিট রয়েছে মাত্র ১২০টি। এখানে বসে পড়ার জায়গা না পেয়ে কেউবা বেলকুনিতে বেঞ্চ পেতে বসছেন, আবার অনেকেই যাচ্ছেন ফিরে। অবকাঠামোগত সুবিধা যতটুকু রয়েছে তার নেই স্বুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা।
এদিকে লাইব্ররিতে ব্যবহারের জন্য শৌচাগার রয়েছে মাত্র দুটি। যা নিয়মিত পরিস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী , জরাজীর্ণ অবস্থা, ময়লা -দূর্গন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া রিডিং রুমের মেঝে ও ফ্যানগুলো অপরিস্কার ও নোংরা। দেয় না ঠিকমতো বাতাস। ময়লাযুক্ত ফ্যানে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ভাষ্য, লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত পরিস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারতলা ভবনের জন্য মাত্র একজন সুইপার রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,তাদের বেশিরভাগ সময়ই রিডিং রুমে পড়তে এসে সিট না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।আবার অনেকেই লাইব্রেরির বাইরে আসন পেতে বসে, অনেকেই দুই তলার বারান্দায় বসে পড়ে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বারান্দায় বসে পড়ার পরিবেশ নেই। তাই অনেক শিক্ষার্থীকেই আসন না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।
তাছাড়া মেয়েদের শৌচাগার দুইতলায় থাকায় তাদেরকে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও মেয়েদের শৌচাগার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয় বলে জানান মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ বলেন, স্টুডেন্ট যখন বেশি থাকে তখন ওয়াশরুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়৷ এটা একটি বিব্রতিকর অবস্থা। আর ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা নেই। বামপাশের ফ্যান নষ্ট, বাতি নেই। তাছাড়া ফ্যানগুলোতে ময়লা লেগে আছে ৷ পরিস্কার করা হচ্ছে নাহ। ফলে ঠিক মত বাতাস দেয় না। এগুলোর দিকে কর্তৃপক্ষের নজর নাই৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পড়ার কাজে মাঝে মধ্যে ইন্টারনেটর প্রয়োজন হয় কিন্তু সেটা ব্যাবহার করা প্রায়ই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। লাইব্রেরির মেঝে কখনো পরিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে হয়না। লাইব্রেরি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটির সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্ববান হওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইবনে গালিব বলেন, কর্তৃপক্ষ বরাবরের মত লাইব্রেরির বিষয়ে একটু বেশিই উদাসীন, হোক সেটি লাইব্রেরীর বই সংক্রান্ত অথবা অবকাঠামোগত ব্যাপার। রিডিং রুমের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্লাস আমরা ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগাভাগি করে ওয়াশরুমগুলো ব্যবহার করি ৷ একটি দরজা সম্বলিত ওয়াশরুম দু’টি৷ একটি ছাত্রীদের অন্যটি কর্মকর্তা -কর্মচারীদের ৷
লাইব্রেরিয়ান ড.ধীমান কুমার রায় বলেন, পূর্বে একটা ওয়াসরুম ছিলো। ছাত্র-ছাত্রী মিলে একটাই ব্যবহার করত৷ তারপর আমরা ছাত্রীদের জন্য আলাদা করে দিয়েছি বিশেষ করে আমি দায়িত্বে আসার পরে । দোতলায় দুটি ওয়াশরুম রয়েছে যার একটি আমরা মেয়েদের জন্য আলাদা করে দিয়েছি।
স্টাফ ও ছাত্রীরা সমন্বিত দরজার দুটি ওয়াশরুম ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমরা ভিতরে কাঠ দিয়ে পাটিশন করে দিয়েছি।পরে আসন সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিল্ডিং প্রয়োজন কিন্তু বিল্ডিং তো হচ্ছে না । আমরা তো চাচ্ছি রিডিংরুমের আসন বাড়াতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সংকটের বিষয়টা আমাদের মাথায় আছে৷ শিক্ষার্থীদের জন্য আরো বড় পরিসরে কীভাবে কাজ করা যায়, এই অপ্রতুলতা কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চারতলা ভবন বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির প্রথম তলার একপাশে রিডিং রুম অন্য পাশে মেডিকেল সেন্টার, দ্বিতীয় তলায় লাইব্রেরি ও কর্মকর্তা -কর্মচারী বসার স্হান, তৃতীয় তলায় নতুন চালু হওয়া সমাজকর্ম বিভাগের ক্লাসরুম ও অফিসরুম। রয়েছে অতিরিক্ত ক্লাসরুম ও ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণের রুম এবং চতুর্থ তলায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।