যানজট কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা বরিশালবাসীর। মহাসড়কে সাগররদি ও নথুল্লাবাদ ছাড়াও শহরের ভিতরেই যানজটে অস্থির নগরবাসী। নতুন বাজার থেকে নথুল্লাবাদ এখন স্থায়ী ও গাঁ সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু নগরীর বাংলাবাজার থেকে সদর রোডের জেলখানা মোড় পর্যন্ত যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের পাশে গজিয়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলো বলে মনে করেন বরিশালের সুশীল সমাজ ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোকে প্রধান সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে সুন্দর মনোরম পরিবেশে নেয়া হলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বরিশাল নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে।
সরেজমিনে ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় সড়কে নামতেই প্রথমেই আটকে যেতে হয় নগরীর বাংলাবাজার এলাকায়। এখানে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এর জন্য বিশাল যানজট তৈরি হয়েছে সড়কে। বরগুনা থেকে আসা একটি এম্বুলেন্স থেকে রোগী নামাতে যেয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই যানজটের। প্রায় ঘন্টা পার করে জিলা স্কুলের মোড়ে পৌঁছাতে আবার যানজটে আটকে যেতে হয় এরিনা হোটেলের সামনে। এখানে এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিবিরপুকুর পাড় ও অশ্বিনী কুমার টাউনহল এলাকা পুরোটাই যানজটে দূর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সয়ং ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা পর্যন্ত বিরক্ত সড়কে দাঁড়িয়ে রোগী ওঠানামা করানো এ্যাম্বুলেন্স ও সিএনজিচালকদের আচরণে। সার্জেন্ট শাহিন নিজেই বিরক্তি নিয়ে বললেন, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলো নগরীর বর্ধিত এলাকায় হওয়া উচিত ছিলো।
সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বললেন, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। প্রধান সড়কের পাশে এগুলোর অনুমোদন হয় কি করে? তিনি আরো বলেন, বিবির পুকুর পাড়ে ডাঃ মোকলেছুর রহমান ও বেল ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এর রোগী আসা-যাওয়ার চাপে সড়কে মহাচাপ তৈরি হয় প্রতিদিন। এমনিতেই ফুটপাত দিয়ে চলার উপায় নেই। সবটা দখল করে আছে হকার আর মোটরসাইকেল।
এদিকে সন্ধ্যার পরপরই এই চাপ দ্বিগুণ আকার ধারণ করে বলে জানান কাকলী মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল শাহিন। এসময় বেল ভিউ এর গলির সামনে দাঁড়ানো একটি সাদা মাইক্রো ও একটি এ্যাম্বুলেন্সের কারণে রাস্তার দুপাশে অসহনীয় যানজট তৈরি হয়। ট্রাফিক সার্জেন্ট আতিক বলেন, এই সদর রোডে সবগুলো মার্কেট ও বিল্ডিংই এই যানজটের জন্য দায়ী। কারণ কারোই কোনো গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোতো আরো বেশি দায়ী বলে জানান তিনি।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোতো প্রধান সড়কের পাশে থাকাই উচিত নয় দাবী করে বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, এই নগরীর কোথাও কোনো পরিকল্পনা নেই। যাচ্ছে তাই অবস্থা। ব্যাস্ততম সড়ক আটকে মিছিল মিটিং চলে, সড়কের পাশে ভবন নির্মাণ হয় কিন্তু কার পার্কিং থাকেনা। সবমিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলো নগরীর বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সিটি মেয়রকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান সামাজিক আন্দোলনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কাজী মিজানুর রহমান, রফিকুল আলম এবং শাহ সাজেদা প্রমূখ। তাদের দাবী সদর রোড কেন্দ্রীক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং মাঝখানের লোহার ডিভাইডার তুলে দেয়ার। এই ডিভাইডারের কারণে জরুরী প্রয়োজনে ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি যেতে পারেনা বলে জানান সামাজিক নেতৃবৃন্দ।
সড়কে যানজট সৃষ্টির দায় এড়িয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার বরিশালের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের জন্য সড়কে কোনো যানজট হয় না। আমাদের নিজস্ব পার্কিং রয়েছে। তাছাড়া পুলিশ কমিশনার নিজে আমাদের জন্য এখানে একটি ট্রাফিক বুথ বসিয়ে দিয়েছেন। তবে মাঝেমধ্যে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় না। লোকবল সংকটের কারণে হয়তো এটা হয়।
আপনাদের কার পার্কিং অনেক ছোটো, এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ উপযোগী নয় এবং মোটরসাইকেল দিয়ে ভর্তি হয়ে আছে জানালে তিনি আরো বলেন, এটা ভুল ধারনা আমাদের পার্কিং ৩ সম্পূর্ণটাই গাড়ির জন্য। ১ ও ২ মোটরসাইকেলের জন্য। তাছাড়া এখানে সড়ক ছোটো একটি বাজারও রয়েছে। যে কারণে এখানে যানজট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বেলভিউ ব্যবস্থাপক জাকিরুল মোমিন বলেন, এ্যাম্বুলেন্স ও সিএনজি থেকে রোগী ওঠানামা করতে যেয়ে সদর রোডে বিশাল যানজট আমিও প্রত্যক্ষ করেছি। তবে এটা সবসময়তো হয়না, মাঝেমধ্যে হয়। উপায়ও নেই।কারণ, বেলভিউ এর কথাই ধরুন। এ গলিতে কোনো সিএনজি বা এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারেনা। আবার আদি ভবন ভেঙে সড়ক বড় করাও সম্ভব না। আবার অন্যত্র সরিয়ে নিতে গেলে বেশিরভাগ ডাক্তারদের সমস্যা হবে।
জাকিরুল মোমিন আরো বলেন, এখানে যানজট থাকবেই, কিছুটা কমানো সম্ভব যদি ইজিবাইক, অটোরিকশা ও সিএনজিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সাংবাদিকদের বেশিরভাগ অংশই এই ব্যবসায় জড়িত অথবা এদের থেকে সুবিধাভোগী দাবী করে বরিশালের ট্রাফিক বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তানভীর আরাফাত বলেন, আমরা বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার যানজট নিরসনের জন্য সিটি মেয়রের কাছে লিখিত কিছু প্রস্তাবনা আগেই দিয়েছি। য়ার মধ্যে অন্যতম এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এবং মার্কেট। এগুলো হয় নিজদের কার পার্কিং ব্যবস্থা করবে, নয়তো শহরের বাইরে চলে যাবে। বিষয়টি ঠিক করতে হবে সিটি মেয়রকে।