সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শাপলাপাতা মাছ ধরা এবং বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে বরিশালে প্রকাশ্যেই বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৪ মণ ওজনের একটি শাপলাপাতা মাছ। এনিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশাল নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা বাধা দিলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বেশ কিছুক্ষণ হট্টগোল চলার পর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নিবর হোসেন টুটুলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাতে মাছটি বিক্রি করা হয়।
রাতে মাছটি বিক্রির জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়। খবর পেয়ে এনিমেল ওয়েলফেয়ার সদস্যরা ব্যবসায়ীদের পিছু নেন। রাত ১১টার দিকে ভাটিখানা এলাকায় মাছটি আটকে দেয় এনিমেল ওয়েলফেয়ারের সদস্যরা। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে হাজির হন পোর্ট রোড মাছ বাজারের ব্যবসায়ী, মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিবর হোসেন টুটুল। তার নেতৃত্বে শতাধিক মৎস্য শ্রমিক এনিমেল ওয়েলফেয়ার সদস্যদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। পরে রাতেই মাছটি কেটে ভাগ ভাগ করে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা।
এনিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সমন্বয়ক তুবা নাহার বলেন, ২০১২ সাল থেকে শাপলাপাতা মাছ শিকার ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ। মাছটি বিক্রি বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা নীরব হোসেন টুটুলের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মানিক সিকদার বলেন, মঙ্গলবার নদীর পানি বেড়ে গেলে মাছটি ভোলার চরে একটি তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে আটকা পড়ে। তরমুজ চাষী জসিম বেপারীর কাছ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটি কিনে পোর্ট রোডে নিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে ১০ জন মাছ বিক্রেতা মিলে এটি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনে নেন। পরে ৫০০ টাকা কেজি দরে মাছটি বিক্রি করতে মাইকিং করা হয়। এ সময় কিছু লোক এসে ঝামেলা করছিল। পুলিশ এসে মিটিয়ে দিয়েছে।
পোর্ট রোডের মাছ ব্যবসায়ী পরশ বলেন, বরফ দিয়ে সংরক্ষণের পর রাতেই মাছটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগ নেতা নিবর হোসেন টুটুলকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। মেসেজ দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা একটি শাপলাপাতা মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। এনিমেল ওয়েলফেয়ার নামের একটি গ্রুপ খবর পেয়ে মাছটি আটকে দেয়। তারা এই মাছ শিকার অবৈধ বলে দাবি করে। মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের হৈ-হুল্লোড়ের পর উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রজাতিভেদে শাপলাপাতা মাছ ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ মাছ ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।