বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর বিদায়ের শেষ মূহুর্তেও তিনজনকে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে পদোন্নতি ও চাকুরীতে স্থায়ী করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা। তারা এজন্য সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিস ঘেরাও করে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। বিষয়টি টের পেয়ে প্রশাসনিক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস আগেই ছটকে পরেছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যানবিদ পদে চাকরি করা স্বপন কুমার দাসকে পদায়ন করা হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে। তিনি একই সঙ্গে পরিসংখ্যানবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়েছে আবুল বাশারকে এবং প্রধান পরিকল্পনাবিদ সানজিদ হোসেনের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ তিনজনকে পদোন্নতি, পদায়ন এবং স্থায়ীকরণ নিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে তারা বিগত পাঁচ বছরের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়েও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের ওপর চড়াও হয়েছেন বলেও জানা গেছে। করপোরেশনের প্রশাসনিক শাখার ওএসডিরত ব্যক্তিগত সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এ কে এম হেলাল উদ্দিন অভিযোগ তুলে বলেছেন, মেয়র ঢাকায় থাকা অবস্থায় ব্যাকডেটে ওই তিনজনকে অবৈধভাবে পদোন্নতি, পদায়ন এবং স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। সিইও ফারুক আহম্মেদ একাজে মেয়রকে সহয়তা করেছে। পরিসংখ্যানবিদ পদ বিলুপ্ত না হলেও স্বপন কুমারকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চাকরী স্থায়ীকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাবিদ সানজিদ হোসেন বলেন, ‘আমিও শুনেছি স্থায়ীকরণের বিষয়টা।’ তবে এখনো কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি।
সিইও না থাকায় নগরের প্ল্যান কী করে দিচ্ছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্ল্যান তো সিইও কিংবা সচিবেরাই দেন। তাঁরা না থাকায় সভাও হয়নি, প্ল্যানও অনুমোদন পায়নি।’
এদিকে সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ শেষে হেলাল উদ্দিন জানান, ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই পদন্নোতি হয়েছে। এছাড়াও বিসিসি’র কর্মচারী মনোয়ার বলেন, পাবনার বাসিন্দা কে এখানে চাকরি স্থায়ী করন এবং তাকে দিলে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর যাতে এমন অনিয়ম দূর্ণীতি না হয় সে বিষয় তারা জোরদার ভুমিকা পালন করছেন।
এবিষয়ে পরিসংখ্যান বিদ, একই সাথে জনসংযোগ কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব রত স্বপন কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
এদিকে সম্প্রতি নগরের কাউনিয়া হাউজিং প্রকল্পের ২৪০টি প্লট বরাদ্দ নিয়ে স্বজনপ্রীতিসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করলে এ প্রকল্পে বরাদ্দে স্থিতি অবস্থা দেন আদালত।
এ ছাড়া দুই ধাপে সিটি করপোরেশন ৫ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালককে টোকেন দিয়ে চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে ।
এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন বরিশালের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও পত্রিকায় এ বিষয় বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছেন। এমনকি বিজ্ঞাপন দিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘কাউনিয়া আবাসিক প্লট বরাদ্দ, হলুদ অটোরিকশা লাইসেন্স, করপোরেশনে অবৈধ পদোন্নতি নিয়মবহির্ভূত হলে এর দায় আমি নেব না।’ এ বিষয়ে কোনো অনৈতিক লেনদেনও কাউকে না করার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত।