৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:৪৩

ব্যক্তি স্বার্থের কাঁদা ছোড়া ছুরিতে সতর্ক অবস্থানে আওয়ামী লীগ -বিএনপি !

এম.এস.আই লিমন :-
  • আপডেট সময়ঃ বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৩,
  • 415 পঠিত

এম.এস.আই লিমন, বরিশাল।

বরিশাল-৫ (সিটি করপোরেশন ও সদর) দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ সমাদৃত নির্বাচনী আসন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিত্ব পেয়েছে একাধিকবার। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির ঘাটিকে নিজেদের দখল করায় আসনটি হাতছাড়া করতে চায় না। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে দীর্ঘ যুগের ঘাটিটি পুনরুদ্ধারের।

আসন পুনরুদ্ধারে। তবে উভয় দলই এখন পর্যন্ত রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।

ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও দৃশ্যমান উন্নয়ন ও জনসম্পৃক্ততার কারনে বর্তমানে আওয়ামী লীগ রয়েছে এগিয়ে। কিন্তু গত দুটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করায় আগের চেয়ে পার্থক্য অনেকটা কমিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য বড় সমস্যা হতে পারে নেতাকর্মীদের নামে থাকা একাধিক মামলা। আওয়ামী লীগেও নিজেদের কাদাছোড়াছুড়ির ফলে বিভ্রান্ত এখানকার জনগন।

জানা যায়, ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি প্রার্থীরা এ আসনটিতে টানা বিজয়ী হয়ে আসছিলেন। ২০১৪ সালে এসে জয়ের দেখা পায় আওয়ামী লীগ। বিএনপির বর্জনে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ বিজয়ী হন। ওই বছরের ৯ এপ্রিল হিরণের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হন তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরোয়ারকে পরাজিত করে প্রথম বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম।

বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়,

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির প্রয়াত আবদুর রহমান বিশ্বাস। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন এ্যাডঃমজিবর রহমান সরোয়ার।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ এবং একই বছরের ১২ জুনের ৭ম জাতীয় নির্বাচনে আবদুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে ডা. এহতেশামুল হক নাসিম বিশ্বাস আওয়ামী লীগের মাহাবুবউদ্দিন আহমেদকে (বীরবিক্রম) দ্বিগুণের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৯৯৮ সালে নাসিম বিশ্বাসের মৃত্যুতে উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদকে পরাজিত করে বিজয়ী হন বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরোয়ার এমপি নির্বাচিত হয়ে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হন। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলেও এ আসনে আওয়ামী লীগ নতুন প্রার্থী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীমের থেকে মাত্র ৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে তাকে পরাজিত করে জয়ী হন মজিরব রহমান সরোয়ার।জানাগেছে, এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত বরিশালে বর্তমান আওয়ামী লীগের শক্ত পোক্ত অবস্থান তৈরীর সূচনা করেছে প্রায় লক্ষ ভোট পাওয়ার মাধ্যমে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম। এরপর থেকে বরিশালের রাজনীতির হাওয়া বদলাতে শুরু করে বর্তমানে পাকাপোক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল সদরের রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈরিতা ছিল প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের। তার মৃত্যুর পর নতুন বৈরিতা শুরু হয় বর্তমান সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরিশাল জেলা শাখার সহ-সভাপতি কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীমের সঙ্গে, যা প্রকট আকার ধারণ করে সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে। সিটি নির্বাচনে চাচার কাছে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পেছনে জাহিদ ফারুক শামীমকে দায়ী করেন বিদায়ী মেয়র নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে আঃলীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আবদুল্লাহ। যার ফলে সাদিক এখন জাহিদ ফারুক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন।এতে করে মাঠের রাজনীতিতে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হচ্ছে ব্যপক ভাবে। বর্তমান সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী’র বিরোধিতা করতে গিয়ে মেয়র পদের দলীয় বঞ্চিত বিদায়ী মেয়র ও তার সহোদরা প্রকাশ্যেই বর্তমান সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী’র বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে উন্নয়ন মূলক কাজের বিষয় ধামাচাপা দিয়ে কথা বলায় আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও সরেজমিনে দেখা যায়, তুলনামূলক ভাবে বিগত চার বছরে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজ বরিশাল সদর ৫ আসনে দৃশ্যমান ভাবে ফুলে থাকলেও বিদায়ী মেয়র হাসানাত আব্দুল্লাহ র পুত্রের বিরোধিতা মূলক আচরণের কারণে আওয়ামী লীগ সংগঠন কেই এর খেসারত দিতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন মন্তব্য করেন।

জাহিদ ফারুক ও সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়াও আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইতে পারেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বরিশাল উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদুর রহমান রিন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান খান।

সাংবাদিক নেতা এসএম জাকির হোসেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান।

বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে কোনো কিছুই বলছেন না সদ্য বিদায়ী বঞ্চিত আঃলীগের মেয়র মনোনয়ন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তবে তিনি বর্তমানে বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলায় যেসব কর্মসূচি পালন করছেন সেখানে সব বক্তাই তাকে (সাদিক) আগামীতে এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে তার ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের কিছু সমর্থোক একটি পক্ষ দাবী তুলেছে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বলেন, গত পাঁচ বছরে জনগণের দেওয়া ভোটের সম্মান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব শতভাগ পালনের চেষ্টা করেছি। পেরেছি কিনা তা আমার আসনের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী ভালো জানেন। তবে দেশ ও দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করিনি। আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব, জননেত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও রয়েছে দলীয় কোন্দল। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মজিবর রহমান সরোয়ারই হতে পারেন দলের প্রার্থী। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বরিশাল বিএনপিতে আধিপত্য ও নেতৃত্বের আসনে থাকা সরোয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সাবেক জেলা সভাপতি এবায়েদুল হক চান ও প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালকে একাধিকবার দলের পদ-পদবি ও বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন যুদ্ধে শামিল হতে দেখা গেছে।

কামালের মৃত্যুর পর সরোয়ার-চানই এখন বরিশাল বিএনপির মূল চালিকাশক্তি বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়াও বর্তমানে দলে অবস্থান গড়ার চেষ্টা করছেন দলটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মহিলা এমপি অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন।

তার পরও বরিশাল-৫ (সদর) আসনে এখন পর্যন্ত সাবেক এমপি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ছাড়া বিকল্প কোনো প্রার্থীর কথা ভাবছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এবং মামলার রায়ে অযোগ্য না হলে সরোয়ারকে আটকানো কঠিন হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। তবে সরোয়ারের নামে একাধিক মামলা থাকায় শেষ পর্যন্ত কপাল খুলে যেতে পারে চান অথবা শিরিনের।

অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আমরা একদফার আন্দোলনে রাজপথে রয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে বরিশালের জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকব। দল নির্বাচনে গেলে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইব।

এদিকে বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে ধীরে ধীরে ভোটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে চরমোনাই পীরের দল- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নবম সংসদে সরোয়ার ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতলেও ইসলামী আন্দোলন পায় ২৭ হাজার ভোট। আর এ কারণে এবার বিএনপি-আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চরমোনাই পীরের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত। তবে দলটি এবারও একক নির্বাচনে নামবে বলে জানা গেছে। ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী কে হবেন তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আমাদের সময়কে জানান ফয়জুল করিম।

অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির এ আসনে তেমন একটা প্রভাব নেই। স্থানীয়ভাবেও দলটি বহুভাগে বিভক্ত। একদিকে মহানগর জাতীয় পার্টি, অপরদিকে জেলা জাতীয় পার্টি। কেউ কারও মুখ দেখেন না দীর্ঘদিন ধরে। এর পরও জাপার মনোনয়ন চাইতে পারেন অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...

এই বিভাগের আরো সংবাদ...
© All rights reserved © ২০২৩ স্মার্ট বরিশাল
EngineerBD-Jowfhowo