পটুয়াখালীর গলাচিপাতে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টির কারণে তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার অধিকাংশ তরমুজ চাষিরা। রোপণকৃত তরমুজ গাছ ও ফলন পচে অধিকাংশ খামারিদের। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলায় এ বছর ৭হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। তরমুজ চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।
কিছুকিছু চাষি আগাম তরমুজের চাষ করায় সেই ক্ষেতের তরমুজ বাজারে বিক্রিও করেছেন। আর অধিকাংশ চাষির ফলনকৃত তরমুজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কেটে তা বিক্রি করার উপযোগী হওয়ার কথা। কিন্তু চৈত্র মাসের ভারী বর্ষণে তরমুজ চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছেন।
বৃষ্টির পানিতে তাদের তরমুজ ক্ষেতগুলো তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও দুই একদিন স্থায়িত্ব হলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে কৃষক ও তরমুজ চাষিরা। এতে চাষিরা অন্তত শত শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও তরমুজ চাষীরা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এখন তারা মহা বিপাকে পড়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে তরমুজ ক্ষেতগুলো তলিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অনেক এলাকায় বৃষ্টির সাথে শিলা পড়ার কারণে তরমুজ, হুইপ ও আলু নষ্ট হয়ে গেছে । অনেক স্থানে চাষিরা তাদের ক্ষেতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কাজ করেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুফল পাচ্ছে না।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের কৃষক মো. বেল্লাল মাতব্বর বলেন, চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে ফলনও ভালো হয়েছে। হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টির কারণে পানিতে তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ওই কারণে ফলন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভুক্তভোগী তরমুজ চাষিদের পথে বসতে হবে এবং কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাবে।
গোলখালী ইউনিয়নের নলুয়াবাগী গ্রামের তরমুজ চাষি মো.আশিক বলেন, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টির কারণে তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গতকাল রাতে সেচ দিয়ে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন করেছি। আজ দুপুরে আবার বৃষ্টি হয়ে অতিরিক্ত পানি জমে আছে তরমুজ ক্ষেতে। এতে গাছ ও তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে।
এ দিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, অফিসের মেঘের মানচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত আর ঝড় বাতাসের প্রভাব থাকতে পারে। তবে দ্রুত আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। নিম্নচাপের প্রভাবে চলমান এই বৃষ্টিপাত থাকতে পারে আরও কয়েক দিন।
গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিসার আরজু আক্তার বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে দ্বিগুণেরও বেশী জমিতে তরমুজ ও আলু সহ অর্থকরী ফসল আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিনের অব্যাহত মুষলধারে ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় কৃষকরা আতংকে রয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা মাঠে থেকে কাজ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছেন।
যদিও দ্রুত ক্ষেত থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় গাছ ও ফল দুটোই পচে নষ্ট হয়ে যাবে এবং বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। কৃষকেরা সরকারের কাছে তাদের এ ক্ষতিপূরণের জন্য সহযোগিতা কামনা করছেন।