১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৬:৪৯

অনিয়মে ববি, দুর্নীতিতে পবিপ্রবি

রবিউল ইসলাম রবি ॥
  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, জুন ২৬, ২০২৪,
  • 100 পঠিত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) বর্তমান আপগ্রেডেশন নীতিমালায় সংশোধনীতে জৈষ্ঠতা লঙ্গন ও বিধিবহির্ভূত “ডিরেক্ট অফিসার্স এসোসিয়েশন” নামক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশে উদ্বিগ্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অপরদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সেকশন অফিসার সহ অন্যান্য পদে অবৈধ নিয়োগ বাতিল চেয়ে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার দাবীতে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ববি:- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস আইন অনুযায়ী এস, আর, ও নং ১০৮ আইন/২০১১/০৫. ১৭১.০২২.০১.০০.০১০.২০১০ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের শর্তাংশে প্রদত্ত ক্ষতাবলে রাষ্ট্রপতি উক্ত সংবিধানের ১৪০ (২) অনুচ্ছেদের বিধান মোতাবেক ক্র.নং ১০ এ পদোন্নতিপ্রদানের শর্তাবলী (১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত জেষ্ঠ্যতা তালিকা অনুসরণ ব্যতীত কোনরূপ পদোন্নতি প্রদান করা যাইবে না। এই আপগ্রেডেশন নীতিমালায় সংশোধনীতে ১৩ তম গ্রেডের কর্মচারীদের থেকে ১১ তম গ্রেডের কর্মচারীদের সাথে জৈষ্ঠতা লঙ্গনের অভিযোগের উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে ববি’র রেজিস্ট্রার বরাবর গত ‌১০ জুন লিখিত আবেদন করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে.এম. সাইফুল ইসলাম। অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়া গুটিকয়েক কর্মকর্তা মিলে গত ২ জুন “ডিরেক্ট অফিসার্স এসোসিয়েশন” নামক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেছে। যা সংগঠনের গঠনতন্ত্রের নিয়ম বর্হিভূত হওয়ায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও সম্পাদকসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গত ৪ জুন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন। আইন ও নিয়ম বিধিবর্হিভূত বিষয় দুটিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

পবিপ্রবি:- পবিপ্রবি’র উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চলমাান বছরের গত ৩ জুন পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আরো একটি মামলা (নং ২৪২/২৪) দায়ের হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার সরকারী জনতা কলেজ রোড এলাকার মৃত শামসুল হক এর ছেলে মোঃ শামসুল হুদা রিফাত। দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু, ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একই অভিযোগ এনে একই আদালতে ইসরাত জাহান অনি বাদী হয়ে পবিপ্রবি’র ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুমকী পটুয়াখালী সেকশন অফিসার পদে ৩১/১০/২০১৮ ইং তারিখ পবিপ্রবি/প্রশা-১১৯/ন-০৮/১৮ ২১৩৭ নং স্মারকে এবং ১৬/১১/২০২২ ইং তারিখ পবিপ্রবি/প্রশা-১১৯/ন-০৮/২৬৪৬ নং স্মারকে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে সেকশন অফিসার নিয়োগের জন্য ০১/১১/২৩ থেকে ০২/১১/২৩ ইং ০৪/১১/২৩ থেকে ০৭/১১/২৩ ইং তারিখে বাছাই বোর্ডে নিয়োগের জন্য সুপারিশ রিজেন্ট বোর্ডের ০২/১২/২০২৩ ইং তারিখে সিদ্ধান্ত ০৩/১২/২০২৩ ইং তারিখের সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ কার্যক্রম অবৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার থাকাকালীন ট্রেজারার মোহাম্মদ আলী ঔরষজাত কন্যা হাবিবা জান্নাত মীম (রেজিঃ নং ০৪৩৩) কে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। নিজে কোর্স টিচার নিযুক্ত হইয়া উদ্যান তত্ত্ব বিভাগে সেসন জুন ২০১৮ একাডেমিক দুর্নীতির মাধ্যমে ১ম বিভাগ উর্ত্তীন করে হাবিবা জান্নাত মীম কে অত্র বিশ্ব বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

ট্রেজারারকে বিধি বহির্ভুতভাবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি করে পরিকল্পিতভাবে রেজিস্ট্রার ড. কামরুল ইসলাম কে বাদ দিয়ে বিধিবর্হিভূত প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার কে রেজিষ্ট্রার (অঃ দাঃ) ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব করে বিধিবহির্ভূত প্রফেসর ড. পুনেন্দ্র বিশ্বাসকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করে (১-৪) নং বিবাদী। তারা পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী অবৈধভাবে গত ০১-১১-২০২৩ ইং তারিখ থেকে ০২-১১-২০২৩ তারিখ এবং ০৪/১১/২০২৩ তারিখ থেকে ০৭/১১/২০২৩ইং তারিখ সেকশন অফিসার সহ অন্যান্য পদে নিয়োগের জন্য বিধি বহির্ভূত ০২টি বাছাই বোর্ড গঠন করে । অত্র বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ জসিম উদ্দীন বাদলের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে সেকশন অফিসার পদে, ১নং বিবাদী ভিসি ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়‍্যারম্যান এর পুত্র শাওন সামন্ত্র তনুকে সেকশন অফিসার পদে, ঐ পদে ইতিপূর্বে দায়িত্ব থাকা মোঃ কামরুজ্জামান কে সেকশন অফিসার পদ থেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান জুয়েলের আপন ভাই মোঃ আরিফুর রহমান পিয়েল কে সেকশন অফিসার পদে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তারেক এর আপন ভাই মোঃ হাফিজুর রহমানকে সেকশন অফিসার পদে পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোঃ সোহেল এর স্ত্রী তাকসিনা নাজনিন কে সেকশন অফিসার পদে দুমকী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর পুত্র তানভীর হাসান স্বাধীনকে সেকশন অফিসার পদে (গ্রেড-৯) পদে নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে (১-৪নং) বিবাদী বাছাই কমিটি কে অন্যায় ভাবে বাধ্য করিয়া নিয়োগের জন্য রিজেন্ট বোর্ডে অনুমোদনের জন্য সভায় উপস্থাপন করা হয়।

পরবর্তীতে ২ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয় এবং সেকশন অফিসার পদে বিজ্ঞপ্তিতে ৪ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাছাই বোর্ড ৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে।পরে ৩ ডিসেম্বর নিয়োগদের ডাক্তারি পরীক্ষার কথা থাকলেও ওই দিনই তারা যোগদান করেন।মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও টাকা লেনদেনের গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বাদী উপযুক্ত প্রার্থী হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। এজাহারে সেকশন অফিসারসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।

এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর পবিপ্রবিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্যের ছেলেসহ ৫৮ জনকে নিয়োগের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৪ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা যায়।

ববি:- লিখিত আবেদনে উল্লেখ রয়েছে, গত ৪৯তম সিন্ডিকেটে আপগ্রেডেশন নীতিমালা প্রনয়ণ হয়েছিল সে প্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ভিন্ন গ্রেডে (১১ তম ও ১৩ তম) ভিন্নতর শিক্ষা যোগ্যতায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে (০৪, ০৫, ০৬ বছর) অতিক্রান্ত হওয়ার পর অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর ১৩ তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ সমমান পদে ও ১১ তম গ্রেড কম্পিউটার অপারেটর থেকে ১০ম গ্রেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ সমমান পদে আপগ্রেডেশন সম্পন্ন হয়েছিল।

এক্ষেত্রে ১৩ তম গ্রেডে অফস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর/সমমানের পদ থেকে ১০ম গ্রেডে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে ০৫ বছর এবং ১১ তম গ্রেডে কম্পিউটার অপারেটর/সমমানের পদ থেকে ১০ম গ্রেডে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে ০৪ বছর আপগ্রেডেশন নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ ১৩ তম গ্রেডধারীদের ০১ বছর বেশি সময় নির্ধারণ করা রয়েছে। বর্তমানে আপগ্রেডেশনের নীতিমালার সংশোধনী পর্যায়ে ১০ম গ্রেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে উন্নীত হওয়ার পর ১৩ তম গ্রেডধারীদের সাথে ১১তম গ্রেডধারীদের কোনো সময়ের ব্যবধান না রেখে উভয় গ্রেডধারীদের একই সময় অর্থাৎ ০৩ (তিন) বছর চাকুরির অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে করে ১৩ তম গ্রেডের কর্মচারীদের থেকে ১১ তম গ্রেডের কর্মচারীদের সাথে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন ...

এই বিভাগের আরো সংবাদ...
© All rights reserved © ২০২৩ স্মার্ট বরিশাল
EngineerBD-Jowfhowo