বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের আ.লীগ শাসনামলে দখলবাজির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু ড্রেজার দিয়ে পুকুর ভরাট, ফসলি জমি নষ্ট করাসহ পরিবেশ নষ্ট করে আসছে সুমন। ড্রেজার মালিক সুমনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে চলমান মাসের ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বরিশাল সদর উপজেলার ২ নং কাশিপুর ইউনিয়ন শাখার আহবায়ক আলী আহমেদ মিয়া ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হক শিকদার।
লিখিত অভিযোগে যা উল্লেখ রয়েছে, আমরা বরিশাল সদর উপজেলার ২ নং কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে এই মর্মে আপনাকে অবগত করিতেছি যে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাধারণ মানুষ জিম্মি করে সুমন নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘ বছর ধরে কাগজপত্র বিহীন অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাট ব্যবসা করে আসছে। যত্রতত্র চর কেটে বালু উত্তোলনের কারণে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি নদীতে মারাত্মক ভাবে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে পাইপ টেনে ফসলি জমি নষ্ট, বালু দিয়ে পুকুর ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতা সহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে আসছে।
বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে তাকে ড্রেজার তুলে নেয়ার জন্য অসংখ্য বার বলা সত্বেও তিনি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং কাশিপুরের কতিপয় আওয়ামী ও তথাকথিত বিএনপি নামধারী-আওয়ামী লীগ এলাকার চিহ্নিত দখল বাজ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ছাত্র কাশিপুর ইউনিয়নের বিল্ববাড়ি নিবাসী কাজী মোঃ আবু যাঈদ দিগন্ত’র দুই লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৬টি মাছ শিকারের হুইলসহ সিপ লুটপাটকারীদের সাথে নিয়ে অবৈধভাবে বালু ভরাট কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় শুরু করেন ড্রেজার মালিক সুমন। জনস্বার্থে আমরা একাধিকবার সুমনকে ড্রেজার তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ করি। কথা না শুনার পর তার (সুমন) বিরুদ্ধে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করি। পরিবেশ অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে ড্রেজার বন্ধ করে এবং সুমনকে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে অফিসে যেতে বলেন। কিন্ত সুমন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
পরে ড্রেজার স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেও ড্রেজার মালিক কথা না শুনে গত ১৯/১০/২০২৪ইং তারিখ পুনরায় কাশিপুর ইউনিয়নের মগরপাড়া গ্রামের চিহ্নিত আ.লীগ সন্ত্রাসী মোঃ হুমায়ুন কবির ও একই গ্রামের বাসিন্দা নেছার উদ্দিন জাফর গাজী, তিলক গ্রামের মাদক কারবারী অবৈধ দখলবাজ রাশেদ মাঝি সহ লাকুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ হোসেন ইমরান চৌধুরী, ধর্ষণ মামলার আসামী আবু তাহের খোকন মুন্সি, আশিকুর রহমান মিলে ফসলি জমির উপর দিয়ে পাইপ দিয়ে বালু উত্তোলনের সংবাদ পেয়ে আমরা দলীয় নেতৃবৃন্দ নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেই। এ সময় উল্লেখিত ব্যক্তিরা সহ আরো ১৫/২০ জন ঘটনার দিন মগরপাড়া ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাদের খুন করার হুমকি দেয়। আমরা তাদের হুমকি প্রত্যাখ্যান করে কাজ বন্ধ রেখে চলে আসি এবং সন্ধ্যার পরে আমরা নেতৃবৃন্দ পুরো ঘটনাটি বরিশাল বিমান বন্দর থানায় উপস্থিত হয়ে থানার অফিসার ইন চার্জ কে অবগত করি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই। তিনি আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে আমাদের অবৈধ ড্রেজার বন্ধ করে দেয়ার কথা আশ্বস্ত করে এবং বরিশাল জেলা প্রশাসক, মাননীয় পুলিশ কমিশনার, সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
এমতাবস্থায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ দাখিল করিলাম। এ ঘটনার অনুকূলে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে যে কোনো সময় দলীয় নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষের সাথে খুন খারাপির মতো ঘটে যেতে পারে। যার দ্বায় কোনোভাবেই কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপি নিতে বাধ্য বলে উল্লেখ করা হয়।
আবেদনকারী আলী আহমেদ মিয়া বলেন, আ.লীগ আমলে লুটপাট করে নরকরাজ্যে পরিনত করেছিল সুমন। এখন আবার মগরপাড়া নিবাসী হুমায়ূন কবির নামে এক আওয়ামী সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে বহিষ্কৃত বিএনপি আওয়ামী লীগের লুটেরাদের সাথে নিয়ে পুনরায় লুটপাট শুরু করেছে। বিগত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে দেশ স্বাধীন হওয়ার রাতেই লাকুটিয়া পদ্ম দিঘির মাছ লুট করে। লাকুটিয়া বাজারে দোকান দখল করে। এরা এতোটাই বেপরোয়া যে এদের হাত থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুলিবিদ্ধ ছাত্র বিল্ববাড়ী নিবাসী সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ছাত্র কাজী মোঃ আবু যাঈদও রক্ষা পায়নি। সারসী দিঘির লিজ গ্রহীতার অনুমতি নিয়ে সেই দিঘিতে মাছ শিকার করতে গেলে যাঈদের দুই লক্ষাধীক টাকা মূল্যের হুইলসহ ৬ টি সিপ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যা আজ অবধি ফেরত দেয় নাই। মেধাবী এই ছাত্র যাঈদের পিতা কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর দৈনিক দখিনের খবর পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক এবং কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বৃহত্তর কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতা জানান, মগরপাড়া নিবাসী আওয়ামী সন্ত্রাসী হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে একই গ্রামের বরিশাল সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নেছার উদ্দিন জাফর গাজী, যুবদল নেতা রাশেদ মাঝি, জেলা ছাত্রদলের সহসম্পাদক ও বরিশাল আইনজীবী সমিতির কেরানি ইমতিয়াজ হোসেন ইমরান চৌধুরী, কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আশিকুর রহমান, বিএনপি নেতা ধর্ষন মামলার আসামি আবু তাহের খোকন মুন্সি এরা বিগত ৫ আগষ্ট রাত থেকে গোটা কাশিপুর ইউনিয়নে লুটপাট, দলবাজি, লাকুটিয়া বিএডিসি ফার্মে শ্রমিক নিয়োগের নামে ঘুষ বানিজ্য, সারসী দিঘির লিজ গ্রহীতা আলামগীর ফরিদের কাছ থেকে ওয়ার্ক অর্ডার ছিনিয়ে নিয়ে কাউনিয়া নিবাসী হুমায়ূন কবির নামে জনৈক ব্যাক্তির নামে লিখে দেয়া, সেই দিঘিতে বরিশাল নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মিশাদ বেগের নেতৃত্বে টিকিট বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ গোটা ইউনিয়ন জুড়ে একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। যা এখনো বিদ্যমান। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে আঁতাত করে দলীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে এসব লুটপাট কারী দূরণীতিবাজ দখল বাজ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন কারীদের অনতিবিলম্বে বিহিস্কারের জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে জোড়ালো দাবি জানাই।
অভিযুক্ত সুমন মুঠোফোনে বলেন- সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে লিখিত অভিযোগের নকল কপি উঠানোর পর আমিও আইনানুযায়ী কঠোর পদক্ষেপে অবস্থান নিবো। ড্রেজার ব্যবসার বৈধতা নিয়ে বলেন আবেদনকারীই ভালো বলতে পারবে।