২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ৯:২২

দীর্ঘ মাস প্লান অনুমোদনের জটিলতায় ক্ষতির মূখে পরে ক্ষুব্ধ নগরবাসী

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪,
  • 93 পঠিত

দীর্ঘ মাস থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) এলাকায় ভবন নির্মাণে কোন প্লান অনুমোদন দিচ্ছে না কতৃপক্ষ। কেনো বা কি কারনে নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য প্লান অনুমোদনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে তা সুস্পষ্ট করেও জানানো হয় নি বিসিসি থেকে।বিসিসি সূত্র মতে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ আগষ্ট থেকে ইমারত নির্মানে প্লান অনুমোদনের কার্যক্রম সম্পুর্ণ বন্ধ রয়েছে আর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ১৫ শ আবেদন জমা পরে আছে। কি কারণে বিসিসি কতৃপক্ষ প্লান অনুমোদন করছে না তা না বলাতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে সহস্রাধিক সেবাগ্রহীতা নগরবাসিদের। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র ২০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসরাত জাহান অভিযোগ করেই বলেন, নতুন ভবন নির্মাণ করতে বিসিসিতে সকল বিধি মোতাবেক নিয়মানুযায়ী নকশা অনুমোদনে ১ হাজার টাকার ফরম পূরণ করে অন্যান্য ভ্যাট ট্যাক্সের টাকাও পরিশোধ করে কয়েক মাস যাবৎ নগরভবনের সংশ্লিষ্টদের কাছে গিয়ে ধরনা দিয়ে আসছে৷ প্লান শাখা থেকে প্লান অনুমোদনে জটিলতার কারণে বন্ধ থাকার বিষয় জানানো হলেও কতৃপক্ষ সুস্পষ্ট করে না বলাতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদেরকে। বিসিসি’র রাজস্ব আয়ের বৃহৎ একটি অংশ নকশা অনুমোদনের ভ্যাট ট্যাক্স থেকে আসলেও অদৃশ্য কারনে কতৃপক্ষ তাদের সকল কাগজপত্র এবং ভ্যাট ট্যাক্সের টাকা জমা করা সত্ত্বেও অনুমোদন না দেয়ার ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে।প্লান অনুমোদনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে থাকায় বিসিসি’র রাজস্ব আয়ে যেমন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে একই ভাবে নগরউন্নয়নের কার্যক্রমও ব্যহৃত হচ্ছে বলে জানান। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ মাস আবেদন জমা করেও প্লান অনুমোদন না পাওয়ায় ভোগান্তির চরম মুহূর্তে গিয়ে পৌছালে তারা এক প্রকার ক্ষুব্ধ হয়েই অভিযোগ করে বলেন,দীর্ঘ কয়েক মাস যাবৎ ভবন নির্মাণের জন্য সিটি কর্পোরেশন এর নির্ধারিত সকল ফি জমা দিয়ে আবেদন করলেও মাসের পর মাস যাবৎ প্লান অনুমোদন করছে না কতৃপক্ষ কেনো বা কি কারনে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না কেনই বা এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে তাও সুস্পষ্ট করে জানাচ্ছে না তাদেরকে৷ ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন উপক্রম মালামাল কিনে রাখার ফলে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির মূখে পরতে হচ্ছে তাদেরকে।

অপর দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র রাজস্ব খাতের বৃহৎ আয় হয় এই প্লান অনুমোদনের বিভিন্ন ভ্যাট ট্যাক্স এবং ফি’র টাকায়। রাজস্ব খাতের অর্থ সিটি কর্পোরেশন এর সকল কর্মকর্তা কর্মচারী দের বেতন ভাতা সহ নগর উন্নয়নে ব্যয় হয়। বিসিসি’র রাজস্ব খাতে ঘাটতি দেখা দেবার উপক্রম ঘটলেও কতৃপক্ষ কার্যক্রম চালু না করার বিষয় টি বোধগম্য হচ্ছে না নগরবাসিদের । বিগত বেম কয়েক মাস যাবৎ প্লান অনুমোদনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্লান অনুমোদনে জটিলতা, হয়রানির প্রতিবাদ ও ১০ দফা বাস্তবায়নে মানববন্ধন করেছে বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টায় নগর ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ভবন নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে এলইউসি ও প্লান দেয়া বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুুখীন হচ্ছেন বাসিন্দারা। প্লান অনুমোদনের জন্য নগর ভবনে গেলে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। বিশেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে ফাইল ধরেন না। এমনকি বিগত দিনে মেয়র-কাউন্সিলরদেরও পার্সেন্টেজ দিয়ে প্লান পাস করাতে হতো। শুধু ঘুষেই সীমাবদ্ধ ছিল না, রাজনৈতিক দল বিবেচনায় ভবন নির্মানের প্লান দেওয়া হতো। অথচ নগরবাসীর সেবার জন্য নগর ভবনকে চালিয়ে রাখছে নগরবাসী। কিন্তু নগরভবনে সেবা নিতে এসে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয় নগরবাসীর।

এসময় বকক্তারা আরও বলেন, ইমারত নির্মান বিধিমালা ১৯৯৬ এর উপ-বিধি (৭) অনুসারে ৪৫ দিনের মধ্যে প্লান অনুমোদন দেয়া ও গেজেট বহির্ভূত ও অকার্যকর মাস্টার প্লানের অজুহাত দাঁড় করানো বন্ধ করতে হবে। শহরের অধিকাংশ রাস্তার প্রশস্ততা কম থাকায় গতাণুগতিক ও প্রচলিত নিয়মে প্লানের অনুমোদন দিতে হবে।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ বহির্ভূত ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রথা বাতিল করতে হবে। বিধিমালা ১৯৯৬ এর তফসিল-২ অনুসারে প্লান অনুমোদনের ফি নির্ধারণ করতে হবে। যে সমস্ত এলাকায় কিংবা বাড়িতে পানির সরবরাহ লাইন সংযোগ করা হয়নি সেই সব এলাকার জনগণকে পানির বিল হইতে অব্যাহতি দিতে হবে। ভবনে বসবাস শুরু করার পূর্বপর্যন্ত হোল্ডিং ও পানির বিল নেয়া যাবে না। প্লান অনুমোদনসহ সব ধরনের সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে। পূর্বে ভরাটকৃত ব্যক্তিগত রেকর্ডিয় জমির শ্রেণিতে পুকুুর উল্লেখ থাকলে প্লান অনুমোদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। খালের পাড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের রেকর্ডিয় জমির ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণে জমি ছাড়ের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবভিত্তিক সমাধান করতে হবে।

এ ১০ দফা আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে বৃহত্তর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় মানববন্ধন থেকে বক্তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আবু সালেহ্ ও যুগ্ম আহবায়ক হাফিজুর রহমান হীরাসহ প্রমুখ। এর আগে ৭ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে একই দাবীতে স্মারকলিপি দিয়েছিল বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলন।

সকালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র নগর ভবনের সামনে ক্ষুব্ধ নগরবাসী সহ প্লান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্মের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল বারী এ বিষয় বলেন, ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মানের আইন অনুযায়ী প্লান অনুমোদনের কার্যক্রম চললেও নতুন আইন অনুযায়ী অনেক প্লান বাতিল হচ্ছে । আর আগামী সপ্তাহে এবিষয়ে মিটিং করে পুনরায় প্লান অনুমোদনের কার্যক্রম চালু হবে বলে জানান তিনি।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...

এই বিভাগের আরো সংবাদ...
© All rights reserved © ২০২৩ স্মার্ট বরিশাল
EngineerBD-Jowfhowo