২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ৯:২৪

কেন্দ্রের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বরিশালে বিএনপি’র শীর্ষ দুই নেতার শোডাউন

বার্তা ডেক্সঃ
  • আপডেট সময়ঃ শনিবার, জানুয়ারি ১১, ২০২৫,
  • 63 পঠিত

বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় জনগণের মাঝে রাষ্ট্র কঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করছিলেন দলের পদবঞ্চিত নেতারা। ঠিক সেই মুহুর্তে বিশাল শোডাউন নিয়ে নগরীতে প্রবেশ করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব।দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষে করে বিশাল এ শোডাউনটি কাশিপুর হয়ে শেষ হয় সদর রোড দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে। দীর্ঘ এ শোডাউনের ফলে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে সদর রোড পর্যন্ত সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে ভোগান্তির চিত্র ফুটে উঠে যানবাহন শ্রমিক, যাত্রী এবং পথচারীদের মাঝে।দলের দায়িত্বশীল নেতা হয়েও কেন্দ্রের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এ ধরনের শোডাউন দলের প্রতি অসম্মান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

তাছাড়া এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ এবং অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামের ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বরিশাল মহানগর বিএনপির পদবঞ্চিত নেতারা। শনিবার সকাল থেকে দিনভর নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে কাশিপুর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে লিফলেট বিতরণ করেন তারা। ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন পদবঞ্চিত নেতারা।ঠিক সেই মুহূর্তে সাদা ও কালো রঙের দুটি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে বরিশালে ফেরেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের কাশিপুর এলাকায় তাদের অভ্যর্থনা জানান অনুসারীরা। পরে বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে নগরীতে প্রবেশ করেন মনিরুজ্জামান ফারুক ও জিয়াউদ্দিন সিকদার।এসময় তাদের বহনকারী সাদা এবং কালো রঙের দুটি মাইক্রোবাসের পেছনে ছিল অসংখ্য মোটরসাইকেলের বিশাল একটি বহর। নথুল্লাবাদ এলাকায় পৌঁছালে ব্যস্ততম সড়কের মাঝে গাড়ি দুটি দাঁড় করিয়ে অনুসারী নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মনিরুজ্জামান ফারুক এবং সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার।

এর ফলে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে। শুধু নথুল্লাবাদ পর্যন্তই নয়। মহানগর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের এই শোডাউন বিএম কলেজ, নতুনবাজার এবং জেলখানার মোড় হয়ে শেষ হয় সদর রোড অশ্বিনী কুমার টাউন হল সংলগ্ন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়েছে।

সমস্ত সড়ক জুড়েই ঘণ্টাব্যাপি যানজট আর ভোগান্তির চিত্র ফুটে উঠে। এ নিয়ে সমালোচনা করতেও দেখা যায় নগরবাসীকে।দলীয় সূত্রে জানা যায়, জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হয় এমনভাবে কোনো কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে কোনো প্রকার বিলবোর্ড টাঙানো এবং নেতাদের শোডাউন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা দলের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়।শুধু নির্দেশনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি দলটির হাউকমান্ড। বরং নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নিজ সংসদীয় এলাকা নোয়াখালীতে শোডাউন করায় শো-কজ করা হয় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ব্যারিস্ট্রার মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর একই অপরাধে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুল, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তানভীর উদ্দীন রাজিব এবং নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বরিশালে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কেন্দ্রের নির্দেশনা উপেক্ষা করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজন উল্লেখকরে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর বলেন, আমরা মহানগর বিএনপির সাবেক নেতৃবৃন্দ সকাল থেকে দিনভর নথুল্লাবাদ এলাকায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ করেই দেখতে পারি বিশাল একটি মোটরসাইকেল শোডাউন নিয়ে কেউ নগরীতে প্রবেশ করছে। বহরে থাকা দুটি মাইক্রোবাস কিছু সময় নথুল্লাবাদে দাঁড়িয়ে জমায়েত সৃষ্টি করে। পরে জানতে পারি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব বহর নিয়ে যাচ্ছেন।আকবর বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষ ভোগান্তিতে পরে এমন কোনো প্রকার শোডাউন না করার নির্দেশনা দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এখন মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হয়েও আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব কিভাবে এবং কতটুকু সেই নির্দেশনা মেনেছেন সেটা তারাই বলতে পারবেন। তবে যেহেতু এটা কেন্দ্রের নির্দেশনা, তাই কেন্দ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বলে আমরা মনে করি।তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানা যায়নি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের। আহ্বায়কের ব্যবহৃত দুটি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা সত্যেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সদস্য সচিবের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াট্সঅ্যাপে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।যদিও মহানগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ওনারা (মনিরুজ্জামান ফারুক-জিয়াউদ্দিন সিকদার) দলের সিনিয়র নেতা। দলের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা তারা কতটুকু বাস্তবায়ন করেছেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। একসময় আমি বরিশাল নগরীতে অনেক শোডাউন করেছি। বড় বড় বিলবোর্ড লাগিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে দলের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। জনগণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, জনগণের স্বাভাবিক জীবন যাপনে যাতে বাধার সৃষ্টি না হয় সেজন্য শোডাউন, বিলবোর্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিধায় আমিসহ আমার অনুসারীদের নির্দেশনা মানতে বলেছি। কিন্তু দলের দু’জন সিনিয়র নেতা হয়েও তারা কিভাবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করলেন সেটা আমার বুঝে আসছে না।

এদিকে, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, এই ঘটনা শুধু বরিশাল মহানগরে নয়। গৌরনদীতে একই ঘটনা ঘটেছে। দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন ছাত্রদল নেতাদের হুমকি দিয়ে বহরে নিয়ে বিশাল শোডাউন করেছেন, এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষেত্রে নিজেদের জানান দিতে নেতারা শোডাউন দিচ্ছে, বিলবোর্ড টাঙাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে দলের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বা নির্দেশনা দেয়া আছে। যা অনেকে জানে, আবার অনেকে জানে না। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে, এবং অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে এমন কাজ করছে সেটা বড় অপরাধ। তবে এটা কোনো নেতার গাত্রদাহন হলে সেটা হবে রাজনৈতিক ঘোর বিরোধীতার সামিল।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...

এই বিভাগের আরো সংবাদ...
© All rights reserved © ২০২৩ স্মার্ট বরিশাল
EngineerBD-Jowfhowo