বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) কর্তৃক ‘দোকান ও ফ্লোর বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি’ ঘোষণা হবার পরই চরম উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন চৌরাস্তার ফল ব্যবসায়ীরা। স্থানটিতে গত দুই তিন যুগ ধরে ফলের ব্যবসা করে সন্তানদের লেখাপড়া সহ সংসার পরিচালনা করে আসছে প্রায় ৩০ জন ব্যবসায়ী। চলমান মাসের মাঝামাঝি সময় বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে দরপত্রের মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা হবার পরই ব্যবসার পজিশন ধরে রাখতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে ওই সকল ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবী, তারা ২/৩ যুগ ধরে চৌরাস্তার পাশে ব্যবসা করে আসছে। তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। জনপ্রতি ব্যবসায়ীর ৫/৬ লাখ টাকা এককালীন এবং অসচ্চলদের কিস্তিতে ওই টাকা নেয়া হোক। আ.লীগ-বিএনপি শাসনামলে বিসিসির সাবেক মেয়র সকলেই চৌরাস্তার ফলব্যবসায়ীদের স্টল করে ভাড়া দিবেন বলে ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু বিসিসি থেকে একাধিকবার ফল ব্যবসায়ীদের স্টল দেয়ার তালিকা নেয়া হলেও কার্যক্রমে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
পরিষ্কার করে বিষয়টি সম্পর্কে ফল ব্যবসায়ী মো. শহিদ খান বলেন, একটানা ৩৫ বছর ধরে এখানে ফলের ব্যবসা করে আসছি। প্রথমে নিজের/নিজেদের অর্থায়নে কাঠের দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা শুরু করি। বিসিসির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কাঠের দোকান ভেঙ্গে বিল্ডিং নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেয়ার উদ্যাগ নিয়েছিল। পরে বিসিসির সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শুরু করে ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেয়ার উদ্যাগ নিয়েছিল। কিন্তু কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমি সহ সকল ফল ব্যবসায়ীরা শুরুতে দৈনিক ২ টাকা থেকে খাজনা শুরু করে পর্যায়ক্রমে এখন দৈনিক ৫০ টাকা করে খাজনা পরিশোধ করে আসছি। তাই আমারা পুরাতন ব্যবসায়ীরা দরপত্র ছাড়াই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ওই অর্থের মাধ্যমে দোকান চুক্তিবদ্ধ ভাবে নিতে চাই। কারণ, জীবনে আমরা কখনও দরপত্রে অংশগ্রহন করিনি এবং এর নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবগত নই।
ফল ব্যবসায়ী মো. জলিল হাওলাদার বলেন, আ.লীগ-বিএনপি শাসনামলে বিসিসির সাবেক মেয়র সকলেই চৌরাস্তার ফলব্যবসায়ীদের স্টল করে ভাড়া দিবেন বলে ব্যক্ত করেছিলেন। সেই অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্ত হঠাৎ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন দরপত্রের মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দরপত্রের বিষয়ে আমার/আমাদের সামন্যতম জ্ঞান নেই। আমি সহ পুরাতন ফল ব্যবসায়ীদের দাবী হল- সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক স্টল প্রতি একটি নির্ধারিত মূল্য ধরে দেয়া হোক। আমরা পুরাতন ব্যবসায়ী সকলে সেই অর্থ পরিশোধ করে স্টল বরাদ্দ নিবো। কিন্তু দরপত্রে অংশগ্রহণ করা নিয়ে আমাদের নূন্যতম জ্ঞান নেই।
ফল ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত মোল্লা বলেন, ছেলে-মেয়ে লেখাপড়ার খরচ সহ সংসার পরিচালনা করে আসছি এই ফল ব্যবসা করে। সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র যারা ছিলেন তারা সকলেই চৌরাস্তার ফল ব্যবসায়ীদের স্টল নির্মাণ করে দিবেন। আমরা সকলে সেই অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্ত এখন শুনি দরপত্রের আহবান। জীবনে কোন দরপত্রে অংশগ্রহণ করিনি। তাছাড়া বিসিসি থেকে একাধিকবার ফল ব্যবসায়ীদের স্টল দেয়ার তালিকা নেয়া হলেও কার্যক্রমে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ফলব্যবসায়ী মো. সোহেল গাজী বলেন, বিসিসির সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারওয়ার, মৃত. আহসান হাবিব কামাল, মৃত. শওকত হোসেন হিরণ, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সকলেই বলেছিলেন, চৌরাস্তার ফল ব্যবসায়ীদের স্টল নির্মাণ করে তাদের ভাড়া দিবেন। এমনকি একাধিকবার ফলব্যবসায়ীদের তালিকাও নেয়া হয়েছিল।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, দরপত্র অংশগ্রহণে যে সর্বোচ্চ দরদাতা হবে সেই পাবে।