যেদিন তুমি চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য থেকে শেষবারের মতো বিদায় নিয়েছিলে, সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম-
একদিন মনে করে ঠিক তোমাকেও ভুলে যাবো।
ভুলে যাবো এই চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রতি তোমার ভালোবাসার সোনালী স্বপ্নের কথা; যে স্বপ্নে ছিলো বাকলার নদী তীরের চন্দ্ৰভদ্র সমাজটি হবে উন্নয়নের সমাজ! ভুলে যাবো প্রতিটি সড়ক ছিলো যেনো চুলের বিনুনিতে গুঁজে দেয়া বেলীফুলের গল্পগাঁথা।
পুরোনো বাঙালিয়ানাকে জাগিয়ে তুলেছিলে নৌকা বাইচে, সাথে সওগাত হিসেবে পাঠিয়েছিলে ‘মেয়র নাইট’ নামে এক আধুনিকতার উন্মাদনা!
অন্তর্যামী জানেন,
তোমার স্বপ্নেই লেখা হয়েছিলো তোমার সাথে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রণয়ের মহাকাব্য! বলেছিলে, “এই মহানগরটির নাকি ভালোবাসার খুব প্রয়োজন।” তাই কথা দিয়েছিলে, মহানগরকে এমনভাবে সাজাবে যেনো মনে হবে শাড়ির আঁচলে বুনে দেয়া একঝাঁক শিউলি ফুল আর প্রমত্ত কীর্তনখোলাকে সামনের শীতে জোনাক ধরে গড়িয়ে দিবে নাকফুল আর শতবৃক্ষের কণ্ঠি পড়াবে এই মহানগরের গলে!
আকাশের সব আলোয় গড়া টিপের মতো রাতে উজ্জ্বল আর ভ্রমরকৃষ্ণ কাজল চোখের মতো দিনের যে সড়করাজি ভালোবাসায় বধ করেছিলো চন্দ্ৰভদ্র সমাজকে, সে আজ ঘূর্নিপাকে পথ হারায়, মুখ থুবড়ে পড়ে দিবাস্বপ্নলোকে।
মনের ঘরের আলমারিটায় তোমার দেয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি তালাবন্ধ, সঙ্গোপনে; তোমার দেয়া নিমন্ত্রণের চিঠির ভাঁজ আজ আর খোলা হয় না, বাক্সবন্দী করা সযতনে।
জানো?-আজও যেমন রোজ নামাজ শেষে তোমার জন্যে সংগোপনে দুয়া হয় আবার সংগোপনে ঠাকুরের বেদীতে প্রণাম হয় তোমার নামে;
সবাই ভুলে যায় যে, তুমি বিদায় নিয়েছো!
বড় সাধ জাগে, ঘড়ির কাটাঁ কয়েক বছর পিছিয়ে নিতে।
প্রতিজ্ঞা করেছিলে, উন্নয়নের একগুচ্ছ কদম দিবে প্রতিটি শ্রাবণমেঘে! উত্তরীয় জড়াবে চন্দ্ৰভদ্র সমাজের প্রতিটি প্রবীনের গলে, সামনের সবগুলো শীতে!
আর সেই তুমি, খেলাঘর বাঁধতে এসে ভেঙে দিয়ে গেলে বৈশাখী ঝড় হয়ে। ভুলে সব প্রতিশ্রুতি, চলে গেলে চন্দ্ৰভদ্র সমাজের মানুষগুলোকে একা করে বহুদূরে।
যদি দূরবীণে চোখে রেখে ভবিষ্যৎটা দেখা যেতো
তবে চন্দ্ৰভদ্র সমাজের প্রতিটি মানুষ
এজন্মেই সব ঋণ শুধিয়ে দিতো জমা আছে যতো।
যেদিন মনের গহীনে তোমার শেষ চিরকুট পেয়েছিলাম; যে চিরকুটে লেখা ছিলো-
‘এই অধঃপতিত মহানগরে আর ফিরবো না’;
অপ্রকাশিত কাব্যের মতো যেদিন বুকের গভীরে আশ্রয় চেয়ে
হারিয়ে গিয়েছো মৃত অন্ধকূপে সবাইকে কাঁদিয়ে, বিশ্বাস করো,
সেদিনই অভিমানে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, দিব্যি করে বলছি,
একদিন মনে করে ঠিক তোমাকেও ভুলে যাবো।
কিন্তু আলতো করে আবির মেখে লুকিয়ে যাও আজও চুপিসারে,
ভাবতেই শরীরখানি আজও দেখ কেমন করে কেঁপে ওঠে!
তাই ভুলে যেতেই যে বারবার ভুল হয়ে যায়!…
আহমেদ রুবাইয়াত ইফতেখার ( বাবু )
সাবেক সহ-সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।