সরকারী ভাতা’র টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আইসিইউ’র সামনেই মারামারিতে ব্যস্ত সন্তানরা ওদিকে মা হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মায়ের চিকিৎসার তদারকি করায় আইসিইউ থেকে ধরে এনে বড় দুই ভাই মিলে মারধর করেছে ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে। সন্তানদের এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড অবশ্য জেনে যেতে পারেনি হতভাগ্য ওই মা। সোমবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৭০)।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের তৃতীয় তলার আইসিইউতে রোববার (৯ এপ্রিল) রাতে মারামারির ওই ঘটনা ঘটে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি জানান, মারামারির ঘটনার সূত্র ধরে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়নি। তিনি বার্ধক্যজনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে। তবে ওই পরিবার থেকে পরস্পর বিরোধী দুই ধরণের মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জানা গেছে, বরিশাল নগরীর পশ্চিম বগুড়া রোড এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন ২০২২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর অবসরকালীন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতেন তার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৭০)। জাহানারা বেগম ছোট ছেলে তানজিল হোসেনর সাথে থাকতেন। অবসরকালীন ও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার জন্য অনেকদিন আগে থেকেই চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তানজিল হোসেন ও তার মাকে মারধর করে বড় দুই ছেলে মারুফ হোসেন রিপন ও শাখাওয়াত হোসেন সুমন।
তানজিল হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় আমার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে শাখাওয়াত হোসেন সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিভিন্ন সময়ে তারা এভাবে আমাদের ওপর হয়রানি চালাতো। ৫ এপ্রিল মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। ৯ এপ্রিল বড় দুই ভাই মারুফ হোসেন শিপন, শাখাওয়াত হোসেন সুমন, তাদের স্ত্রী ও সহযোগীদের নিয়ে আইসিইউএর মধ্যে ঢুকে মায়ের চিকিৎসার কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি নিষেধ করলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ধরে এনে আইসিইউএর সামনে ফেলে মারধর করেন।
তিনি জানান, আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে মুসলিম গোরস্থানে মায়ের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
তবে অভিযুক্ত অপর দুই ভাইকে সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে বাসায় পাওয়া না যাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে স্থানীয় ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের দুটি বিয়ে ছিল। তার মৃত্যুর পরে দুই পক্ষের সন্তানরা সম্পত্তির ভা-বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়শই বিরোধে জড়িয়ে মারামারিতে লিপ্ত হন।
আইসিইউতে দায়িত্বরত নার্সরা জানিয়েছেন, অন্যান্য রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের স্টাফরা মারামারি থামিয়েছেন। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়। তাছাড়া আইসিইউতে থাকা ওই রোগী আজ (সোমবার) সকালে মারা গেছেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেছেন, রোববার রাতে আইসিইউর সামনে রোগীর স্বজনরা নিজেরা মারামারি করেছে বলে শুনেছি। অসুস্থ রোগী মারা গেছেন। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।