ব্যাংকের বাইরে সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে নানা আর্থিক পণ্য। এর মধ্যে অন্যতম হলো সঞ্চয়পত্র। রয়েছে প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন বন্ড। এ ছাড়া আরও রয়েছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, প্রাইজবন্ড, পোস্টাল লাইফ বিমা। এর সব কটিই বিনিয়োগ পণ্য, যাতে বিনিয়োগ করে মানুষ ভালো মুনাফা পান। কোনো কোনো পণ্যে মুনাফার হার ১২ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। সরকার এসব পণ্যের মাধ্যমে টাকা ধার করে বাজেট ঘাটতি পূরণ করে।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়মে কড়াকড়ি, মুনাফা কমানো ও মানুষের হাতে সঞ্চয় করার মতো টাকা না থাকায় বিনিয়োগ কমে গেছে। তবে এখন কারও কারও পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কারণে নতুন বিনিয়োগ হতে পারে।
সর্বশেষ বিনিয়োগ চিত্র
সঞ্চয়পত্র, প্রবাসীদের বিভিন্ন বন্ড, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, প্রাইজবন্ড, পোস্টাল লাইফ বিমা ইত্যাদিতে মানুষ টাকা রাখেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে এসব পণ্যে ৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও ভাঙানো হয় ৭ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। ফলে নিট বিনিয়োগ কমে যায় ৭০ কোটি টাকা। একইভাবে অক্টোবরে নিট বিনিয়োগ কমে ৯৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৯৮৩ কোটি টাকা ও ডিসেম্বরে ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
তবে ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিট বিনিয়োগ ৩৭ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এই মাসে ৮ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও ভাঙানো হয় ৮ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ বেড়েছে। এর আগে শুধু কমছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ ২০২২ সালের জুলাই থেকেই সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ কম হয়। ওই মাসে নিট বিক্রি হয়েছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্টে এ বিক্রি আরও কমে দাঁড়ায় ৮ কোটি টাকায়। সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বলতে বোঝানো হয়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও ভাঙানোর মধ্যকার ব্যবধান।
গত বছরের জুলাইয়ে পরের চার মাস ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়েছে এবং প্রতি মাসেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ৭১ কোটি, অক্টোবরে ৯৬৩ কোটি, নভেম্বরে ৯৮৩ কোটি ও ডিসেম্বরে ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা বিনিয়োগ কমে। অর্থাৎ সাম্প্রতিক প্রবণতা ছিল, যে পরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে, ভাঙানো হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে নেতিবাচক। যদিও ব্যাংকে সঞ্চয়ের তুলনায় সরকারি সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার তুলনামূলক বেশি।
গত জানুয়ারি শেষে এসব পণ্যে বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকায়।
কেন কমছিল
সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় পণ্য হলেও সম্প্রতি এর বিক্রিতে কেন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা উঠে আসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ত্রৈমাসিক ওই প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘ডেট বুলেটিন’।
অর্থ বিভাগ বলেছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে আগের মতো প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কারণ তিনটি। প্রথমত, সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগসীমা নামিয়ে আনা হয়েছে যৌক্তিক পর্যায়ে। তৃতীয়ত, মুনাফার হারের কয়েকটি স্তর করা হয়েছে। এসব সংস্কার কার্যকর করায় সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ আগের তুলনায় কমেছে।
একইভাবে প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগের সীমা কমানো হয়েছে। বাতিল হয়েছে কিছু সুবিধা।
কোন পণ্যে মুনাফা কত
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে মুনাফা ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। মেয়াদপূর্তির আগেও নগদায়ন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে মুনাফা কমবে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে আগে বিক্রি করলে মুনাফা কমবে।
ডাকঘরে সাধারণ হিসাবে টাকা জমা রাখলে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়া হয়। আর এক থেকে তিন বছর মেয়াদি হিসাবে টাকা রাখলে মুনাফা দেওয়া হয় ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে।
এদিকে পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে মুনাফার হার ১২ শতাংশ। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড তিন বছর মেয়াদি। এই বন্ডে বর্তমানে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডও তিন বছর মেয়াদি। মেয়াদ শেষে মুনাফার হার সাড়ে ৬ শতাংশ।