বরিশাল নগরীর সার্কিট হাউসের বিপরীতে সাবেক প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের বোনের বাড়িটি আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে । ২০০৮ ও ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিরনের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান কার্যালয় ছিল এই বাড়িটি। আগামী ১২ জুনের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত হিরনের বোনের বাড়িটিকে তাঁর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীদের পদচারণে সরগরম থাকছে বাড়িটি।
এ ছাড়া প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ওই সময়ের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, সহসভাপতি কে বি এস আহমেদ কবির, আনিস উদ্দিন শহীদ ও দপ্তর সম্পাদক লস্কর নুরুল হক। ২০১৪ সালে হিরনের মৃত্যুর পরে এই চার নেতার বরিশাল আওয়ামী লীগে তেমন অবস্থান ছিল না। ২০১৮ সালে সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে ওই চারজনকে গুরুত্ব দেননি। এবার খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে এই চার নেতাসহ হিরনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন এমন আরো কয়েকজনকে রাখা হয়েছে। তবে এ কমিটিতে স্থান পাননি সাদিক অনুসারী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ অন্য কোনো নেতা।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ও সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই মনে করছেন হিরনের পথেই হাঁটছেন খোকন। এরই মধ্যে তিনি গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিদিন প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মুখপাত্র অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন,‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁরা সবাই দক্ষ।’
কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদককে কেন রাখা হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রার্থী বলতে পারবেন।’
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ২০১৩ সালের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের পরাজয় হয়েছিল। পরাজয়ের পর বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেছিলেন হিরন। ওই সময় তাঁর পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে।
তাঁদের ধারণা, আগামী ১২ জুনের নির্বাচনও খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য কঠিন হতে পারে। কারণ তাঁর ভাই হাসানাত আব্দুল্লাহর পুত্র সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেই মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সাদিক মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক। আস্থাহীনতার কারণেই খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগে সাদিকের অনুসারীদের রাখা হয়নি।
খোকনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মইন তুষার বলেন, ২০১৩ সালের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়ে যাঁদের ভূমিকা ছিল, তাঁরা বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক। তাই সিটি নির্বাচনের আগেই মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা প্রয়োজন, অন্যথায় নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে অনেক বেগ পেতে হবে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য ও মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক হিসেবে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ না-ও করতে পারেন।
অন্যদিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাদিক আব্দুল্লাহর বিশ্বস্ত সহযোগী গাজী নঈমুল হোসেন বলেন, ‘খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা নেই। কেন নেই, সেটা প্রার্থী নিজেই জানেন। তবে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগ খুব শিগগির বর্ধিত সভা করবে। এরপর নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামব আমরা।’