১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ৪:১৫

ফয়জুল করিমকে নিয়ে শঙ্কায় ইসলামী আন্দোলন বিকল্প আবুল খায়ের

বার্তা ডেক্স:
  • আপডেট সময়ঃ রবিবার, মে ৭, ২০২৩,
  • 95 পঠিত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সভায় অঘোষিতভাবে বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ ইছহাক মো. আবুল খায়েরকে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ হোঁচট খাওয়ার পর বদলে যায় ইসলামী আন্দোলনের সেই সিদ্ধান্ত। নতুন ঘোষণা আসে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের মনোনয়ন নিয়ে।

দলটি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে নিয়ে অগ্রসর হলেও পিছু হটতে রাজি নয় এই নির্বাচনে। সেজন্য প্রথম খসড়ার মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের ছোট ভাই ও চরমোনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ ইছহাক মো. আবুল খায়ের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
বরিশাল নির্বাচন অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ছয়জন মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে লুৎফর কবির, আলী হাওলাদার এবং ইছহাক মো. আবুল খায়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের দুই নেতার মনোনয়ন সংগ্রহ নিয়ে খোলামেলা কোনো কথা বলতে রাজি নয় দলটি। তবে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী জাহাঙ্গীরের ঘটনায় কৌশলী ভূমিকা নেওয়া হয়েছে। সরকার যেন কোনো অজুহাতে ইসলামী আন্দোলনকে ভোটের বাইরে না রাখতে পারে তার পূর্বপ্রস্তুতি এটা। বরিশালে আওয়ামী লীগের যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে তাতে সুষ্ঠু ভোট হলে ইসলামী আন্দোলনের বিজয় সুনিশ্চিত বলে মনে করেন তারা। ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী মো. শহিদুল্লাহ কবির জানান, দুইজনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা নির্বাচনী একটা কৌশলও হতে পরে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাচই পযর্ন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তার পরেই সব কিছু খোলাসা হবে। সরকারের শক্ত প্রতিপক্ষ বিএনপি, বাসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বরিশালের প্রেক্ষাপটে এবার ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীই নৌকার মূল প্রতিপক্ষ। ভোটের হিসেবে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বরিশালে বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে দলটির। তাছাড়া সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম রাজনৈতিক দিক দিয়ে স্বচ্ছ ও পরিপক্ব। তবে ইসলামী আন্দোলন তার প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।
কয়েকজন সিনিয়র নেতা এই প্রসঙ্গে টেনে আনেন ২০১৫ সালের কথা। ওই বছরের ২৬ মে সৌদি আরবের রিয়াদের ১৬ নম্বর এক্সিটের কাছের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে রাত ১২টার দিকে মাহফিল থেকে মুফতি ফয়জুল করিমসহ চারজনকে আটক করে সেদেশের পুলিশ। সেই রাতে দুজনকে ছেড়ে দিলেও মুফতি ফয়জুল করিমসহ দুজনকে আটক রেখে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ঘটনায় ৪০ দিন কারাগারে থাকার পর ৭ জুলাই সন্ধ্যায় মুক্তি পান ফয়জুল করিম ও তার সঙ্গী।
মুফতি ফয়জুল করিম ৪০ দিন দেশের বাইরে কারাভোগ বা দণ্ডভোগের বিষয়টি সামনে এনে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যদি মনোনয়ন বাতিল করা হয় তখন প্রার্থীহীন অবস্থায় নির্বাচনের মাঠ ছাড়তে হবে। এজন্য বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে নির্বাচন পরিকল্পনায়। বিকল্পের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন ইছাহাক মো. আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা মুফতি ফয়জুল করিমের জন্য ঐক্যবদ্ধ। তবে প্রক্সি প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়ন কিনেছি। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, বিদেশে কেউ কারাদণ্ডভোগ করলে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে কিনা তা নির্বাচনের আইনে উল্লেখ নেই। বিষয়টি আইনজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। তবে দেশে কেউ দণ্ডিত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না- এটা এখন পর্যন্ত বিধানে বলা হয়েছে। এই কর্মকর্তা বলেন, চরমোনাইয়ের প্রার্থী বিদেশে কারাভোগ বা দণ্ডভোগ করেছেন কিনা তা এখনো নির্বাচন কমিশন অবহিত নয়। এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন বদল করার পেছনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন বঞ্চিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ইন্ধন রয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের হয়ে কাজ না করায় সেই ইন্ধনের গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন অভিযোগ করে বলেন, আমরা শুনে আসছিলাম ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হবেন জেলার সভাপতি। কিন্তু সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়নে বাদ পড়ায় তারাও বদলে দিয়েছে প্রার্থী। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া আর মনোনয়ন বদলে দেওয়ার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। নগরবাসী জানে ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে মেয়র সাদিকের সুসর্ম্পক রয়েছে। ২০১৩ সালে শওকত হোসেন হিরনের নির্বাচনের সময়ও একইভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সাদিক মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে খোকন সেরনিয়াবাতকে হারাতে একই কৌশল গ্রহণ করেছে। সাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের ইন্ধনেই ফয়জুল করিমকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে সাদিক আব্দুল্লাহর মুঠোফোনে কল করা হলে ফোন কেটে দেন। তবে গত শুক্রবার (৫ মে) বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীই আমাদের বিজয়ী করতে হবে। তিনি খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে ভোট দাবি করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন ...

এই বিভাগের আরো সংবাদ...
© All rights reserved © ২০২৩ স্মার্ট বরিশাল
EngineerBD-Jowfhowo