আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনে ইমিতমধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বেশিরভাগ আসনে যোগ্য প্রার্থী সংকটে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপির দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা থাকলেও গতানুগতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ নেই তাদের। তবে ছয় আসনে প্রার্থী রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। দুটি আসনে প্রার্থী আছে যথাক্রমে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বিভক্ত জাসদের দুই গ্রুপের। এছাড়া একটি করে ওয়াকার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ ও এনপিপি প্রার্থী দিতে পারে বলেও জানা যায়। প্রায় শতধিক নেতা বিভিন্ন দলের মনোনায়ন পেতে ইতিমধ্যে নিরব প্রতিযোগীতা শুরু করেছেন।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া):- বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর মর্যাদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি এ আসনে দলের একমাত্র প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও দলের মিডিয়া সেল আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুুসুর রহমান এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত ও এস এম পারভেজ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের শুরা সদস্য মো. মেহেদী হাসান রাসেল।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) :- এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা অনেকটা দীর্ঘ। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র মেঝ ছেলে এফবিসিসিআইর পরিচালক মঈন উদ্দিন আবদুল্লাহ এবং ছোট ছেলে আশিক আবদুল্লাহও প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম, দুই সাবেক সংসদ সদস্য যথাক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মনিরুল ইসলাম মনি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান খান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিছুর রহমান, শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু এবং আওয়ামী লীগ ঘরানার শিল্পপতি ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রার্থী হতে পারেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস. সরফুদ্দিন সান্টু, দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নেছার উদ্দিন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বরিশাল-৩ আসনের বর্তমান এমপি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী তালিকায় আছেন অধ্যাপক মন্টু লাল কুন্ডু ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য জহিরুল ইসলাম টুটুল। জাসদ আম্বিয়া গ্রুপের প্রার্থী দুজন যথাক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনিচুজ্জামান। জাসদ-ইনু থেকে প্রার্থী হবেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সহকারী একান্ত সচিব মো. সাজ্জাদ। ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সাহেব আলী রনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) :- এ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী থাকলেও হেভিওয়েট প্রার্থী সংকটে আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে জোটভুক্ত নির্বাচনে শরিকদের এই আসন ছেড়ে দেওয়ায় যোগ্য প্রার্থী গড়ে ওঠেনি আওয়ামী লীগে। বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দুবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক দুলাল, মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ও ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাপদক মিজানুর রহমান মিজান এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিক এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনায়ন প্রত্যাশী। তারাও নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন এবং মুলাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস ছত্তার খান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সম্পাদক ও সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) :- এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনায়ন প্রত্যাশী সাম্প্রতিক সময়ে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বর্তমান এমপি পংকজ নাথ, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান । এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা (উত্তর) বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী। এ আসনে বিগত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের (মাহমুদুর রহমান মান্না) নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর এবারও প্রার্থী হবেন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী চরমোনাই পীর সাহেবের ছোট ভাই মাওলানা সৈয়দ নুরুল করীম।
বরিশাল-৫ (সদর ও সিটি করপোরেশন) :- দখিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি বর্তমান এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম । রাজনৈতিক ভাবে শক্তপোক্ত অবস্থান তৈরী না হলেও বিগত সময়ের তুলনায় এ আসনে তুলনামূলক ভাবে সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজের মাধ্যমে জনগণের আস্থার স্থান লাভ করেছেন তিনি।ক্ষমতার সময়ে বরিশাল ৫ সদর আসনের ইউনিয়ন গুলোতে উন্নয়ন হলেও সিটি কর্পোরেশন এর এলাকায় তেমন উন্নয়ন হয়নি বলেও স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে। তিনি এবারও মনোনায়ন চাইবেন।
এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এবং সদর উপজেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান চেম্বার সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, এস এম জাকির হোসেন এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনায়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে ইতিমধ্যে মাহবুব উদ্দীন বীর বিক্রম ও এস এম জাকির হোসেন তৃণমূলে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যবসায়ী মশিউর রহমান খানও মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব পাঁচ বারের সাবেক এমপি ও সাবেক সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংরক্ষিত এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মো. রহমতউল্লাহ। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও মহানগর জাপার সদস্য সচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস এবং জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কে এম মতুর্জা আবেদীন। সদর আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের মেঝ ভাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। নির্বাচনের পরিবেশ হলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক আ. ছত্তার।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) :- বিগত দিনে এই আসনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা। এখানে বিএনপির প্রার্থী জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন এবং দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শহীদুল ইসলাম। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তিন বারের এমপি নাসরিন জাহান রত্না আমিন। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব, পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। শোনা যাচ্ছে এই আসনে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার নিজেই এবার প্রার্থী হতে পারেন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নুরুল ইসলাম আল-আমিন। জাসদের (ইনু) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন এবারও এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা যায়।
বরিশালের এসব আসনগুলোতে কর্মীবান্ধব নেতাদের মনোনায়ন দেয়ার দাবী জানিয়েছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির তৃণমূলের দাবী যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে আসনগুলো পুঃরুদ্ধারে যোগ্য প্রার্থীকে যেন মনোনায়ন দেওয়া হয়। বিএনপি এবার নির্বাচনে না গেলে এসব আসনগুলোতে সবচেয়ে বড় ফ্যক্ট হয়ে দাঁড়াবে ইসলামী আন্দোলন।
পরবর্তী পর্বে সরেজমিনের চালচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে!